আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক মোজেজা ছিল। তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে পেছনে দাঁড়ানো মুসল্লিদের দেখতে পেতেন। এটি আশ্চর্যের বিষয় নয় বরং তা ছিল তাঁর অন্যতম মোজেজা এবং নবুয়তের সত্যায়ন।
Advertisement
নামাজে থাকা অবস্থায় পেছনে কী ঘটছে? নামাজে কার মনোযোগ ঠিক হয়নি?- এর সবই তিনি দেখতে পেতেন। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা সুস্পষ্ট যে, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া অন্তর চোখ দিয়ে নয় বরং বাহ্যিক চোখ দিয়ে তা দেখতে পেতেন। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কি মনে করছ আমি শুধু আমার কিবলামুখী হয়ে আছি? আল্লাহর শপথ! তোমাদের রুকু-সেজদা কিছুই আমার কাছে গোপন নয়। আমি আমার পেছন থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।’ (বুখারি ও মুসলিম)
হ্যাঁ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলামুখী হয়েও পেছনের লোকদের নামাজ, রুকু, সেজদা এবং বৈঠক দেখতে পেতেন। এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম মোজেজা। অন্য হাদিসে এসেছে-
Advertisement
>হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জোহরের নামাজ পড়ালেন। এক ব্যক্তি সবচেয়ে পেছনের কাতারে খারাপ ভাবে সালাত আদায় করছিল। (যথাযথভাবে নামাজ পড়েনি) সে নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ডেকে বললেন-‘হে অমুক! তুমি কি আল্লাহকে ভয় করছ না? তুমি কি জান; তুমি কীভাবে সালাত আদায় করেছ? তোমরা মনে কর, তোমরা যা কর তা আমি দেখি না। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি দেখি আমার পেছনের দিকে, যেভাবে আমি দেখি আমার সামনের দিকে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
এ দেখা কি বাস্তবের মতো ছিল নাকি অন্তর দিয়ে?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনের দিকে দেখার বিষয়টি বাস্তবে (চামড়ার চোখে দেখা) ছিল নাকি অন্তর চোখ দিয়ে ছিল?- এ সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট মতামত-- হজরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘জুমহুর তথা সংখ্যা গরিষ্ঠ আলেমের মতে, "এটি বাস্তবিক অর্থেই তিনি (চামড়ার চোখ দিয়ে) দেখতেন।’ (শরহে মুসলিম)- হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও আলেমদের মতামত তুলে ধরেছেন-‘সঠিক এবং নির্বাচিত মত হল- হাদিসগুলো বাহ্যিক অর্থেই গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ এটি বাস্তবে (চামড়ার চোখ দিয়ে) দেখাকে বোঝানো হয়েছে। (অন্তর চোখ দ্বারা দেখা বা আড় চোখে ডানে-বামে সামান্য দেখা নয়)। বরং এটি ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি বিশেষ মোজেজা বা এমন বৈশিষ্ট্য; যা এ ক্ষেত্রে মানবিক বৈশিষ্ট্য বিরুদ্ধ বিষয় (সম্পূর্ণ অলৌকিক বিষয়)।’ (ফাতহুল বারি)- শায়খ উসাইমিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘তিনি (নামাজে কেবলামুখী থাকা অবস্থায়) পেছন দিকে সাহাবিদের দেখতে পেতেন। এটি তার অন্যতম একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই নির্দিষ্ট অবস্থায় (নামাজ অবস্থায়) তিনি পেছনের লোকদেরকেও দেখতে পেতেন কিন্তু অন্য সময় পেছনের কিছুই দেখতেন না।’ (শরহু রিয়াযিস সালেহিন)
হাদিসের উপকারিতপ্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসের অন্যতম শিক্ষা হলো- নামাজের মধ্যে ভয়-ভীতি, বিনয়-নম্রতা, একাগ্রতা, ধীর-স্থিরতা ইত্যাদি ‘নামাজের অন্যতম প্রাণশক্তি‘। এগুলো ছাড়া নামাজ একেবারেই অন্তঃসারশূণ্য হয়ে যায়। তখন নামাজ উঠা-বসা ও নড়াচড়ার নামে পরিণত হয়।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ মোজেজার অন্যতম উপকার হলো, সাহাবায়ে কেরামের নামাজ হয়ে ওঠেছিল একান্ত বিনম্র হৃদয়ের নামাজ। এ কথাই মহান আল্লাহ শুনেন এবং তাতে সাড়া দেন।
Advertisement
এই প্রাণ স্পন্দিত নামাজই মুমিন জীবনে চূড়ান্ত সাফল্যের সোপান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখিত হাদিসের মাধ্যমে নামাজের এই বিষয়টি সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিয়েছেন।
এমএমএস/এএসএম