ভ্রমণ

দেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতে পৌঁছাবেন যেভাবে

বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখ জুড়ায় সবার। অসংখ্য পাহাড়, ঝরনা, বন, পশু-পাখির সঙ্গে সাক্ষাৎ মেলে বান্দরবানে। সেখানকার বিভিন্ন জলপ্রপাতের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো তিনাপ সাইতার। বিশেষ করে এ ঝরনার কাছে যাওয়ার ঝিরিপথ খুবই আকর্ষণীয়।

Advertisement

তিনাপ সাইতার হচ্ছে বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়িতে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। তিনাপ সাইতার একটি বম শব্দ। বম ভাষায় তিনাপ অর্থ নাকের সর্দি এবং সাইতার অর্থ ঝরনা বা জলপ্রপাত। এটি পাইন্দু খালে অবস্থিত।

পানি প্রবাহের দিক থেকে তিনাপ সাইতার বাংলাদেশের সব থেকে বড় জলপ্রপাত। এটা পাইন্দু খালের অনেক ভেতরে অবস্থিত। তিনাপ সাইতারে যাওয়ার পথের ঝিরিপথ খুবই আকর্ষণীয়।

বর্ষা মৌসুমে তিনাপ সাইতারে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। তিনাপ সাইতার বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। বর্ষা মৌসুমে তিনাপ সাইতারে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। তিনাপ সাইতার বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।

Advertisement

প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অন্যান্য দর্শনীয় জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে তিনাপ সাইতার অনেকটাই ভিন্ন। সব মৌসুমেই এ ঝরনার পানি স্বচ্ছ এবং ঠান্ডা-গরম থাকে। এ পাহাড় থেকে ওই পাহাড়ে আঁকাবাঁকা পথে ১৫০ ফুট উঁচু থেকে এ ঝরনার পানি পড়ে পাইন্দু খালে। সেখানে একেবারেই স্বচ্ছ পানিতে আপনি খালের তলদেশ পর্যন্ত দেখতে পারবেন।

সকালে সূর্যের আলো প্রথম যখন খালের পানিতে পড়ে; তখন রংধনুর সৃষ্টি হয়। পর্যটকরা এ দৃশ্য দেখতে উদগ্রীব হয়ে থাকেন। মনোরোম তিনাপ সাইতার যদিও দুর্গম এলাকায়; তবুও পর্যটকরা নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমায় সেখানে। খাড়া পাহাড় থেকে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে।

শুধু পাহাড় আর ঝরনা নয়, সেখানে যেতে আরও দেখা মিলবে পাহাড়ের গায়ে ভেসে বেড়ানো মেঘ, জঙ্গলে পাখির ডাক, আদিবাসীদের পাড়া, ছোট ছোট খালসহ প্রাকৃতিক নানা সৌন্দর্য। তবে তিনাপ সাইতারে পৌঁছানোর জন্য দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করতে হবে। কোথাও পিচ্ছিল আবার কোথাও কাদা পথ। এমনকি হাঁটতেও হবে অনেক।

যেভাবে যাবেন তিনাপ সাইতারে

Advertisement

ঢাকা থেকে বিভিন্নভাবে বান্দরবন আসা যায়। বাসযোগে সরাসরিভাবে আসা যায়। ঢাকা টু বান্দরবান রুটে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এস. আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দরবনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

এসি ও ননএসি জনপ্রতি বাসের ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৫০০ টাকা। অথবা ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম এসে তারপর চট্রগ্রামের বিআরটিসি টার্মিনাল বা দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ১০০-৩০০ টাকায় বাস ভাড়ায় বান্দরবন আসা যায়। চট্রগ্রাম থেকে প্রাইভেট কারে ২৫০০-৩৫০০ টাকায় বান্দরবন যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে চট্রগ্রামগামী সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর প্রভাতি কিংবা মহানগর গোধূলি ট্রেনে করে চট্রগ্রাম আসা যায়। শ্রেণী ভেদে ট্রেন ভাড়া ৩৫০ থেকে ১৫০০ টাকা। চটগ্রাম এসে উপরে নিয়মে বান্দরবান যেতে হবে।

বান্দরবান থেকে তিনাপ সাইতার

বান্দরবান থেকে দু’টি পথ ধরে তিনাপ সাইতারে যেতে পারেন। রোয়াংছড়ি থেকে এবং রুমা থেকে। বান্দরবন বাস স্ট্যান্ড থেকে রোয়াংছড়ি বাসে যাওয়া যায়। বাসে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে।

রোয়াংছড়ি নেমে পুলিশ স্টেশনে নাম নিবন্ধন করে গাইড ভাড়া করতে হয়। কেপলং পাড়া, পাইখং পাড়া, রনিনপাড়া, দেবাছড়া পাড়া হয়ে তিনাপ সাইতারে পৌঁছানো যায়।

দ্বিতীয় রুটে যেতে হলে বান্দরবন থেকে বাসে করে রুমা যেতে হবে। রুমা সদর থেকে চাঁদের গাড়ি করে দু’টি পথে সহজে যাওয়া যায়। চাঁদের গাড়ি করে ৪৫মিনিট থেকে ঘণ্টাখানেক সময় প্রয়োজন হয়।

এরপর আরথাহ পাড়ায় নেমেই হাঁটতে হবে প্রায় ৪০মিনিট। সেখানে পৌঁছানোর পর কষ্টের কথা ভুলে যাবে-অনায়াসে। পাহাড়ি রাস্তা, সবসময় গাড়ি পাওয়া যায়না। এর জন্য আগেভাবে ঠিক করে রাখতে হবে চাঁদের গাড়ি।

রুমা সদর থেকে সরাসরি চাঁদের গাড়ি করে মুননুয়াম পাড়ায় নামবেন। খাল বেয়ে পায়ে হেঁটে যেতেই ‘আত্লাই তিলি’ গিয়ে পৌঁছাবেন। কলা গাছ বা বাঁশের ভেলায় করে পার হতে হবে।

এ সময় স্বচ্ছ পানিতে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখতে পাবেন। আরো চোখে পড়বে যেন ভেলায় ছুটে চলে আসছে মাছ। ভেলা থেকে নেমেই হাটার ২০মিনিটের মধ্যে গিয়ে পৌঁছাবেন ‘রোয়ালদংপা সাইতার’ বা ঝর্ণা।

এর উচ্চতাও ১০০-১৫০ ফুটের মতো। এ পাহাড়ি পথ দিয়ে সহজে নামতে পারবেন। পায়ে ট্রেকিং সু থাকলে বেশি ভালো হয়।‘রোয়ালদংপা সাইতার’ উপর থেকে নিচে দেখতে যেমন সৌন্দর্য, ঠিক তেমনি নিচ থেকেও একই রকম সুন্দর।

এখান থেকে সামান্য হাঁটলে পৌঁছে যাবেন ‘ঙাথলৌ তিলি’ কুম। তারপর ১০ মিনিট হাঁটলেই চোখে পড়বে তিনাপ সাইতার। এর নৈস্বর্গীক সৌন্দর্য ফেলে আসা দুর্গম পথের ক্লান্তি নিমিষেই দূর করে দেবে।

সতর্কতা

>> প্রায়ই নিরাপত্তাজনিত কারণে বাংলাদেশ আর্মি কর্তৃক তিনাপ সাইতারে দর্শনার্থীদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ থাকে। যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই খবর নিয়ে যাবেন।

>> জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন কার্ড বা যেকোন ধরণের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন।

>> এ পথ পাড়ি দেয়ার পর্যাপ্ত মানসিক এবং শারীরিক প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন।

>> যাওয়ার আগে খুঁটিনাটি সব বিষয় কারো কাছ থেকে জেনে নিবেন।

>> ভালো গ্রিপের জুতা পরবেন।

>> প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ফার্স্ট এইড সঙ্গে রাখবেন।

>> যাত্রাপথে জোঁকের দেখা পাবেন। তাই লবণ সঙ্গে রাখবেন।

>> পানি ও শুকনো খাবার সঙ্গে রাখবেন সবসময়।

>> স্থানীয়দের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন।

>> যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।

জেএমএস/জিকেএস