চট্টগ্রামে অবৈধভাবে পরিচালিত সব ইটভাটা বন্ধে গত তিন মাসে তিনবার সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু এই তিন দফায় ৩৯ দিন সময় পার হওয়ার পরও দিব্বি ইট পোড়ানো চালু রেখেছে ১৭৮টি অবৈধ ইটভাটা। চালু থাকা অবৈধ ইটভাটার এ হিসাব পরিবেশ অধিদফতরের। যদিও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর হিসাবে বর্তমানে চালু আছে এমন অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা হাজারেরও বেশি। অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় হাইকোর্টের আদেশের পরও এসব ইটভাটা বন্ধ করতে উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না।
Advertisement
সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ চট্টগ্রামের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ১৪ কর্মদিবস সময় বেঁধে দেন। কিন্তু সে সময় শেষ হলেও এখনো ১৭৮টি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নিতে পারেনি পরিবেশ অধিদফতর।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জাগো নিউজ। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতরের হিসাবে চট্টগ্রামে ২৫০টি ইটভাটা ছিল, যারা পরিবেশ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে ইট তৈরি করছিল। হাইকোর্টের আদেশের পর গত তিন মাসে অভিযান চালিয়ে ১২৮টি ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় অভিযান চালানো যাচ্ছে না।’
অধিদফতরের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘একদিনে দুই-তিনটার বেশি ইটভাটায় অভিযান চালানো যায় না। প্রতিদিনের অভিযানে খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। এর মধ্যে এক্সাভেটর ভাড়া, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। সে হিসাবে এত বেশি সংখ্যক ইটভাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হলে বিশাল অংকের টাকা প্রয়োজন, যা এখন আমাদের কাছে নেই।’
Advertisement
অবৈধ ইটভাটায় চলছে ইট পোড়ানোর কাজ
বিভিন্ন সময় সহযোগিতা নিয়ে পরিবেশ অধিদফতর অভিযান চালায় জানিয়ে জমির উদ্দিন বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সহায়তা নিয়ে আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালাই। বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে এক্সাভেটর চেয়ে নেয়া হয়। অথচ একদিনের এক্সাভেটর ভাড়া প্রায় ৫০ হাজার টাকা, এ কারণে তারাও লোকসানের মুখোমুখি হন। সব সময় তো এভাবে চেয়ে সহায়তা পাওয়া যায় না। তাই এখন অভিযান বন্ধ আছে। বাজেটের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে, বাজেট পেলে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান চালানো হবে।’
এ সময় আদালতের আল্টিমেটামের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন।’
২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিবেশ ও মানবাধিকার-বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। সেই রিটের শুনানি নিয়ে সাত দিনের মধ্যে চট্টগ্রামে অবৈধভাবে পরিচালিত সব ইটভাটা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশসহ রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
Advertisement
হাইকোর্টের সেসব নির্দেশনা অনুসারে চট্টগ্রাম প্রশাসন কার্যক্রম শুরু করলেও লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলাসহ কিছু জায়গায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না করে শুধু জরিমানা আদায় করা হয়। এ সময় হাইকোর্টের আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করায় চট্টগ্রাম প্রশাসনের দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমান ও এস এম আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন রিটকারীরা।
পরে গত ৩১ জানুয়ারি বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হাসান মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় চলমান অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধে আবারও নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন।
অবৈধ ইটভাটাগুলোতে পুরোদমে চলছে ইট তৈরির কাজ
শুনানির নির্ধারিত দিনে অবৈধভাবে পরিচালিত সব ইটভাটা বন্ধে আবারও সময় প্রার্থনা করলে আদালত ১৪ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেন। এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আজ রোববার (১৪ মার্চ) দিন ধার্য ছিল। রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জাগো নিউজকে জানান, আগামী ১৮ মার্চ এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাজেটের অভাবে পরিবেশ অধিদফতরের অভিযান বন্ধ থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘গত শুনানিতে তারা কখনোই এই বিষয়টি বলেননি। কেন পরিবেশ অধিদফতর বাজেট পাচ্ছে না, কারা তাদের বাজেট দিচ্ছে না, এ বিষয়ে কখনোই তারা জানাননি। এটি তো তাদের হাইকোর্টকে জানাতে হবে।’
এ সময় তিনি পরিবেশ অধিদফতরের অবৈধ ইটভাটার তালিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতর যে ২৫০টি অবৈধ ইটভাটার তালিকা দিয়েছে সেটি আমরা এখনো পাইনি। কখন কয়টি ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে তারও কোনো তালিকা নেই। বিষয়গুলো তাদের স্পষ্ট করা উচিত।’
এদিকে আজ (রোববার) ইটভাটা মালিকদের আরও একটি আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করে দিয়েছেন জানিয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘রাউজানের হাজী লোকমানসহ ১৮ জন ইটভাটা মালিক তাদের ইটভাটাগুলো না ভাঙতে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এখন এসব অবৈধ ইটভাটা মালিক বা তাদের প্রশ্রয়দাতাদের কোনো যাওয়ার জায়গা নেই।’
এআরএ/এইচএ/জেআইএম