যে বয়সে ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে সেবা-ভালোবাসা পাওয়ার কথা, সে বয়সে তাদের সান্নিধ্য হারিয়ে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন বরিশাল নগরীর দরগাহবাড়ী এলাকার বৃদ্ধ বজলু খান (৬৪)। তিনিদুই বছর ধরে একটি ঘরে একাই বসবাস করছিলেন। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের আলাদা সংসার। খোঁজখবর নেন না বাবার। তাই এই বৃদ্ধ বয়সেও কাঠমিস্ত্রির কাজ করে নিজের খরচ চালান বজলু খান।
Advertisement
তার মতো একইভাবে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন নগরীর খান সড়কে বাস করা বকুল বেগম (৫৭)। ১০ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর তারা বকুল বেগমের খোঁজ নেন না। ডিম বিক্রি করে নিজের খরচ চালান এই বৃদ্ধা।
তাদের এই নিঃসঙ্গ ও করুণ অবস্থা দেখে নিজের মা-বাবার মতো ভালোবেসে পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন তরুণ। তাদের উদ্যোগে বজলু খান ও বকুল বেগমের একাকিত্ব ঘোচাতে তাদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। মহা ধুমধামে শনিবার (১৩ মার্চ) তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
এ বিয়ের আয়োজক ইমান আলী, নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মুন্না ও মিলন জানান, বজলু খানের আদি বাড়ি বরিশালের উজিরপুরের কালিহাতা গ্রামে। কয়েক যুগ আগে জীবিকার সন্ধানে তিনি বরিশাল নগরীতে এসেছিলেন। দুই বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী মারা যান। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে থাকলেও তারা খোঁজ নেন না। নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতেন তিনি। একই অবস্থা বকুল বেগমের। তারা দুজনই হাসিখুশি মানুষ। এত দিন বিয়ের কথা বললেও তারা রাজি হননি। হঠাৎ অনুরোধে তারা বিয়ে করতে রাজি হন। এরপর বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। অবশেষে তাদের চার হাত এক করে দেয়া হয়েছে।
Advertisement
এ বিয়ে উপলক্ষে পুরো এলাকায় সাড়া পড়ে যায়। ফুল আর রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয় বর ও কনের বাড়ি। দুদিন ধরে চলে নানা অনুষ্ঠান। প্রতিবেশীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ, গান-বাজনা হৈ-হুল্লোড়, নাচানাচি কোনো আয়োজনেরই কমতি ছিল না এ বিয়েতে।
শুক্রবার (১২ মার্চ) খান সড়ক জামে মসজিদে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে ৩০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়। বিয়ে পড়ান কাজি মো. আবুল। বিয়ের পর উপস্থিত সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়।
শনিবার দুপুরে ছিল কনে তুলে দেয়ার অনুষ্ঠান। এজন্য ৪০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। সেখানে বরসহ ৬০ জনকে আপ্যায়ন করা হয়। খাবারের মেন্যুতে ছিল ইলিশ মাছ, রোস্ট, পোলাও, ঝাল মাংস, মিষ্টি ও দই।
কনে বকুল বেগমকে খালি হাতে বরের বাড়িতে পাঠানো হয়নি। দেয়া হয়েছে আলমারি, খাট, লেপ-তোশক। শুধু তাই নয়, ফুল দিয়ে সাজানো ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে বর-কনেকে ঘোরানো হয় পুরো এলাকা। এই বিয়েতে এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিও উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
নিঃসঙ্গ জীবনে একজন সঙ্গী আসায় খুশি বৃদ্ধ বজলু খান। তিনি বলেন, ‘এতদিন নিঃসঙ্গ ছিলাম। ছেলেমেয়েরা খোঁজ নিত না। তাই চিন্তিত ছিলাম কীভাবে আমার বাকি জীবনটা কাটবে। সেই দুশ্চিন্তা কেটেছে। এলাকার তরুণদের উদ্যোগে আমার এই বয়সেও একজন জীবনসঙ্গী এসেছে। এখন আমার দেখাশোনার একজন লোক হলো।’
সাইফ আমীন/এসআর/এমকেএইচ