শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নওগাঁর বদলগাছীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নামহীন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া ইনফ্রায়েড/নন-কন্টাক্ট থার্মোমিটার ক্রয়েও অনিয়ম হচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজশে এমন অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্লিপ থেকে ১২১টি বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা, ১১টিতে ৭০ হাজার টাকা এবং একটিতে ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এর অর্ধেক পরিমাণ টাকা ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছেছে। এ টাকা থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ হিসেবে- স্থায়ী ইনফ্রায়েড/নন-কন্টাক্ট থার্মোমিটার, স্প্রে মেশিন, ব্লিচিং পাউডার, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, জগ, মগ ও বালতিসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনা হবে। গত বছরের ১৭ মার্চ বন্ধ হওয়া স্কুলগুলো আগামী ৩০ মার্চ চালু করা হবে বলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
রাজশাহীর ‘মার্চইডুকিট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ‘কে৯ প্রো ইন্টেলিজেন্ট সেনসর সোয়াপ ডিস্পেন্সার’ মেশিন এবং ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ সরবরাহ করছে। প্রতিটি মেশিনের মূল্য ধরা হয়েছে ৭ হাজার টাকা এবং ২ হাজার মিলি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম ধরা হয়েছে ১২০০ টাকা।
গতকাল বুধবার (১০ মার্চ) সরেজমিনে বদলগাছীর মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে- একটি মাইক্রোবাসে করে সরঞ্জাম নিয়ে এসে শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া মেশিনের বিষয়ে শিক্ষকদের ধারণা দেয়া হচ্ছে।
Advertisement
সেখানে দুই ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে। বোতলের মোড়কের গায়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের নাম লিখা থাকলেও কোম্পানির নাম নেই। ৫০০ মিলির বোতলে ২৮০ টাকা মূল্য লেখা থাকলেও ২৫০ মিলি বোতলে কোনো মূল্য লেখা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর ‘মার্চইডুকিট’ প্রতিষ্ঠানের ডিস্ট্রিক কো-অর্ডিনেটর মাহমুদ হোসেন মাসুদ বলেন, শিক্ষকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। পরে আমার সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও থার্মোমিটার দেয়ার চুক্তি হয়। আমরা ঢাকা থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বড় বড় ড্রাম কিনে পরে ছোট ছোট বোতলজাত করেছি।
তবে এ হ্যান্ড স্যানিটাইজার কতটা নিরাপদ তার উত্তর তিনি দিতে পারেনি।
এছাড়া থার্মোমিটার মেশিনের দাম বাজার থেকে বেশি নেয়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করি, কিছুটা তো লাভ করতেই হয়। এছাড়া এক বছরের ওয়ারেন্টি দেয়া হচ্ছে।’
Advertisement
উপজেলার প্রধানকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা, বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ ও রামশাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আরা বেগম বলেন, শুনলাম এ মাসেই বিদ্যালয় চালু করা হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্লিপের বরাদ্দ থেকে আমরা এসব মালামাল কিনছি। কয়েকটা কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তবে এ কোম্পানি অনেকটা সাশ্রয় মনে হয়েছে। বাঁকি মালামাল পরে কিনব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফজলুর রহমান বলেন, এ বছর স্লিপের বরাদ্দ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার মালামাল কেনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে অবশ্যই থার্মোমিটার মেশিন মানসম্পন্ন ও স্থায়ী হতে হবে। পণ্যের ব্যাপারে যদি কেউ অভিযোগ করে নামহীন ও মানহীন কোনো আপস করবো না। ছোট বাচ্চাদের বিষয়ে কোনো ছাড় দেব না। এখনো অনেক জীবন জড়িত রয়েছে।
তবে চুক্তিবদ্ধ ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো যোগসাজশ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
আব্বাস আলী/এসজে/এমকেএইচ