সরকারি গুদামে চালের মজুত অস্বাভাবিক মাত্রায় কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাবে দামও বেড়েছে বাজারে। তবে মজুত বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি চলছে। এরই মধ্যে একই ধারায় যুক্ত হয়েছে আরেক প্রধান খাদ্যশস্য গম। সরকারি গুদামে গমের মজুত লাখ টনের নিচে নেমেছে।
Advertisement
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এখন সরকারের গুদামে মাত্র ৯৬ হাজার টন গমের মজুত রয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এক-চতুর্থাংশের মতো। গত বছরের মার্চের শুরুতে সরকারের গুদামে তিন লাখ ৩৬ হাজার টন গম ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে আটা-ময়দার দামও বেড়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে বাজারে আটার দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। পাশাপাশি ময়দার দাম বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ।
সরকারের জন্য গমের বর্তমান মজুত পর্যাপ্ত নয়। কারণ বছরে বিভিন্ন আর্থিক ও ত্রাণ কার্যক্রমে সরকারের চার লাখ টন গমের প্রয়োজন হয়। মজুত কম থাকলে বিতরণ কমে, যা চালের ভোগে বাড়তি চাপ তৈরি করে। এছাড়া যেহেতু সরকারের খাদ্যশস্যের সামগ্রিক মজুতের মধ্যে চাল ও গম দু’টি শস্য অন্তর্ভুক্ত, সে কারণে গম মজুতও পর্যাপ্ত হওয়া দরকার।
Advertisement
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, গমের ভোগ দিন দিন বাড়ছে। প্রচুর মানুষ রুটি-ফাস্টফুড খাচ্ছে। চালের মতো ততো গুরুত্বপূর্ণ না হলেও গম এখন উন্নতমানের খাবার। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক দরিদ্র শ্রেণির মানুষ গম পায়। তাতে চালের ওপর চাপটা কমে। তাই গমের পর্যাপ্ত মজুত সরকারের হাতে থাকতেই হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে দ্রুত গমের চাহিদা বাড়ছে। বছরে এখন প্রায় ৭৫ লাখ টন গমের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে দেশে ১২ থেকে ১৩ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়। অতীতে সরকার বছরে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টন পর্যন্ত গম আমদানি করেছে। বাকিটা যোগান দেয় বেসরকারি খাত বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে। গড়ে ৬০ লাখ টন গম আমদানির প্রয়োজন হচ্ছে প্রতি বছর।
তথ্য বলছে, এ বছর সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের গম আমদানিও বেশ কম। করোনাকালে বিশ্ববাজারে গমের দাম বেশি থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মজুত প্রবণতার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত (১ জুলাই ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ৯ মার্চ) বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি হয়েছে ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার টন গম। যেখানে আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) ৫৯ লাখ ৯৮ হাজার টন গম আমদানি হয়েছিল।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি পর্যায়ে আড়াই লাখ টন গম আমদানির কথা জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) খাজা আব্দুল হান্নান। তিনি জাগো নিউজকে জানান, মজুত পরিস্থিতি ভালো না থাকায় আড়াই লাখ টন গম আমদানি হচ্ছে। এরমধ্যে চলতি মাসেই দেড় লাখ টন গম আসবে। অন দ্য ওয়ে, জাহাজে রয়েছে। সামনের মাসে বাকিটা আসবে। এসব রাশিয়া ও আর্জেন্টিনা থেকে কেনা হয়েছে।’
Advertisement
এদিকে প্রতি বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে কৃষকপর্যায়ে গম সংগ্রহ করে সরকার। এ বছরও এমন উদ্যোগ রয়েছে। গম সংগ্রহের জন্য এ বছর কী পরিমাণ গম উৎপাদন হতে পারে তার সম্ভাব্য তথ্যও সংগ্রহ করছে খাদ্য অধিদফতর। তবে কবে নাগাদ কী পরিমাণ গম কেনা হবে তা জানতে চাইলে অধিদফতরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।’
এর আগে বেশিরভাগ সময় কৃষক পর্যায়ে এক লাখ টন করে গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। গত বছর সংগ্রহ লক্ষমাত্রা কমিয়ে ৭৫ হাজার টন করা হয়েছিল। কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে ৬৪ হাজার টন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাজারমূল্য থেকে দাম কম নির্ধারণ করায় সরকারের কাছে গম বিক্রিতে আগ্রহী হন না কৃষক। সামগ্রিক মজুত বৃদ্ধিতে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ খুব একটা বড় প্রভাব ফেলতে পারে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে আমদানিকেই বেশি প্রধান্য দেয়া হচ্ছে।
এনএইচ/এএএইচ/এইচএ/জিকেএস