দেশজুড়ে

২ যুগের বেশি সময়েও সংস্কার হয়নি সেতুটি

ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া-টেকেরহাট সংযোগ সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি ১৯৮৭ সালে নির্মিত হবার পর এখন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনো সময়ই ভেঙে পড়তে পারে।২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় একটি গাছ পড়ে সেতুটির পূর্ব পার্শ্বের বেশ কিছু অংশ ভেঙে গিয়ে পানিতে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন বাঁশ এবং সুপারি গাছ দিয়ে চলাচলের জন্য সাময়িক ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পারাপার হয় সেতুটি দিয়ে। ফলে ভাঙা সেতুটির সঙ্গে বাঁশ এবং সুপারি গাছ দিয়ে তৈরি সাঁকোটি কিছুদিন পর পরই ভেঙে যাচ্ছে।পার্শ্ববর্তী প্রায় চার কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোনো সেতু না থাকায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পারাপার হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে।সরেজমিনে দেখা যায়, ঝালকাঠি সদর উপজেলা ও নলছিটি উপজেলার সংযোগ স্থলে অবস্থিত পোনাবালিয়া-টেকেরহাট সেতুটি। সেতুর পশ্চিম পার্শ্বে সদর উপজেলা এবং পূর্ব পার্শ্বে নলছিটি উপজেলা। প্রায় একশত পঞ্চাশ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটির অর্ধেকটাই ভাঙা। সেতুটির দুই পাড়ে বাজার ও দুটি বিদ্যালয় রয়েছে। পূর্ব পার্শ্বে টেকেরহাট বাজার এবং পশ্চিম পার্শ্বে হাজরাগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কে এ খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিদিন শত শত ছাত্র ছাত্রীসহ বাজারে আসা অসংখ্য লোকজন ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পার হচ্ছেন।টেকেরহাট বাজারের মুদি দোকানি নুরু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সিডরের সময় সেতুটির পূর্ব পাশে থাকা একটি বটগাছ সেতুর উপর ভেঙে পড়ে। এতে সেতুটির বড় একটি অংশ পানিতে তলিয়ে যায়।৬৪ নম্বর হাজরাগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিক লাল দাস জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের একশত নব্বই জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশেরই বাড়ি সেতুর ওপারে। তাদের ওপার থেকে আসতে অনেক সমস্যা হয়। প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। প্রায়ই পার হবার সময় সেতুটির বাঁশ এবং সুপারি গাছের কাঠামো অংশে বাঁশ এবং সুপারি গাছের ফাঁকে এই শিশু শিক্ষার্থীদের পা আটকে যায় ও হাত-পা কেটে যায়।কে এ খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ৬শ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকেই সেতুর ওপারে নাচনমহল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ও টেকেরহাট থেকে আসে। ফলে অনেক ছাত্র ছাত্রীদের সেতুটি পাড় হয়ে স্কুলে আসতে হয়। স্কুল ছুটি হবার পর আমরা শিক্ষকরা সেতুটির ঢালে দাঁড়িয়ে থেকে ছাত্র ছাত্রীদের পার করে দেই। কারণ অধিক সংখ্যায় পার হবার সময় সেতুটি কাঁপতে থাকে এবং ভেঙে যাবার উপক্রম হয়। যে কোনো সময়ে ভেঙে পড়তে পারে সেতুটি।টেকেরহাট বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, অত্র অঞ্চলের মধ্যে টেকেরহাট একটি বড় এবং ঐতিহ্যবাহী একটি বাজার। বাজারে প্রতিদিন সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যায় অনেক মানুষের সমাগম হয়। এই সেতুটির জন্য এসব মানুষদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া সপ্তাহে দুই দিন রবি ও বৃহস্পতিবার হাট বসে। হাটের দিন প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। আমরা প্রায়ই বাঁশ ও সুপারি গাছ দিয়ে সেতুটির ভাঙা অংশ মেরামতের চেষ্টা করি কিন্তু কিছুদিন পর তা আবার ভেঙে যায়। কর্তৃপক্ষের নিকট বারবার বলা সত্ত্বেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ওয়ারেচ আলী খান জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় একশত পঞ্চাশ ফুট দৈর্ঘ্যরে সেতুটি ১৯৮৭ সালে নির্মাণ করা হয়। অনেক বছর ধরে সংস্কার না হওয়া এবং সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এটি চলাচলের জন্য একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয়রা মিলে বাঁশ এবং সুপারি গাছ দিয়ে যে ব্যবস্থা নিচ্ছি তা কোনো কাজে আসছে না। বৃষ্টিতে এগুলো পঁচে যায়। আমরা ঝালকাঠির স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে (এলজিইডি) জানিয়েছি। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে মৌখিকভাবে কয়েক বার জানিয়েছি তিনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফউদ্দৌলা জাগো নিউজকে বলেন, টেকেরহাট-পোনাবালিয়া সংযোগ সেতুটির বিষয়ে আমরা অবগত আছি। শীঘ্রই সরেজমিন ঘুরে ভাঙা সেতুটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।মো. আতিকুর রহমান/এমজেড

Advertisement