ক্রিকেটে স্বাভাবিকভাবে আউটের ধরন পাঁচটি- বোল্ড, ক্যাচ, স্ট্যাম্পিং, লেগ বিফোর উইকেট ও রানআউট। এর বাইরে হিট উইকেটও দেখা যায় প্রায় নিয়মিত। তবে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ এবং ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ এমন দুই ধরনের আউট যার দেখা মেলে কদাচিৎ।
Advertisement
যে কারণে প্রায় দেড়শ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আইনে আউট হয়েছেন মাত্র ১১ জন ব্যাটসম্যান আর হ্যান্ডলড দ্য বল করে সাজঘরে ফিরেছেন মাত্র ১০ জন ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউটের একাদশ পূরণ হলো সবশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে।
বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচে লঙ্কান ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা আউট হয়েছেন অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আইনে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এভাবে আউট হওয়া ১১তম ব্যাটসম্যান তিনি। অর্থাৎ গুনাথিলাকার মাধ্যমেই পূরণ হলো অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউটের একাদশ।
ম্যাচে টস জিতে আগে আগে ব্যাট করতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কা। ক্যারিবীয় অধিনায়ক কাইরন পোলার্ডের করা ইনিংসের ২২তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি আলতো করে খেলেছিলেন গুনাথিলাকা। রান হতে পারে উইকেট ছেড়ে অনেকদূর বেরিয়ে যান ননস্ট্রাইকে থাকা অভিষিক্ত পাথুম নিসাঙ্কা। কিন্তু রান নেবেন কি, নেবেন না- দোটানায় ভুগছিলেন গুনাথিলাকা।
Advertisement
ততক্ষণে ফলো থ্রু-তে সেই বলের কাছে চলে যান পোলার্ড। তা টের পেয়ে নিজের পপিং ক্রিজে ফেরার চেষ্টা করেন গুনাথিলাকা। কিন্তু ফেরার পথে তার পায়ে লেগে বলের দিক পরিবর্তন হয়ে পোলার্ডের কাছ থেকে দূরে চলে যায়। তখনও ননস্ট্রাইক প্রান্তে ক্রিজের অনেক বাইরে ছিলেন নিসাঙ্কা। ফলে বলটি ধরতে পারলে নিসাঙ্কাকে রানআউট করতে পারতেন পোলার্ড।
কিন্তু গুনাথিলাকার কারণে সেটি করতে না পারায় আম্পায়ারের কাছে আবেদন করেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। অনফিল্ড আম্পায়ার সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। তিনি সফট সিগনাল হিসেবে আউট দিয়ে সিদ্ধান্ত পাঠান টিভি আম্পায়ারের কাছে।
টিভি রিপ্লে’তে দেখা যায় অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই নিজের পায়ে লাগিয়েছেন গুনাথিলাকা। অন ফিল্ডের সফট সিগনালই বহাল রাখেন আম্পায়ার নিগেল দুগুইদ। ফলে সাজঘরে ফিরতে হয় ৫৫ রান করা গুনাথিকালাকে। আর এতেই পূরণ হয় অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউটের একাদশ।
Gunathilaka out obstructing the field #LKA #WIvsSL #SLvWI #SriLanka #Cricket pic.twitter.com/LPV6uKVXws
Advertisement
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই আউটের একাদশ পূরণ হতে লেগে গেল প্রায় ৭০ বছর। সর্বপ্রথম ১৯৫১ সালের আগস্টে ফিল্ডারদের বল ধরতে বাধা দেয়ার এ আইনে কাঁটা পড়েন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান লেন হাটন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেনিংটন ওভালে ঘটে এই ঘটনা।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেয়া ১৬৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমেছিল ইংল্যান্ড। কঠিন কন্ডিশনের মাঝেও মাত্র পঞ্চাশ মিনিটে ৫৩ রান করে ফেলেন দুই ওপেনার লেন হাটন ও ফ্র্যাঙ্ক লওসন। এরপরই ঘটে সেই অদ্ভুতুড়ে আউটের প্রথম ঘটনা।
অ্যাথল রোয়ানের করা একটি ডেলিভারি আচমকা লাফিয়ে প্রথমে হাটনের গ্লাভসে এবং পরে বাহুতে লাগে। খানিক হাওয়ায় ভেসে বলটি স্ট্যাম্পের ওপর পড়ার উপক্রম হয়। তা দেখতে পেয়ে নিজের ব্যাট দিয়ে সেটি সরানোর চেষ্টা করেন হাটন কিন্তু ব্যর্থ হন। আবার বলটিও স্ট্যাম্পে পড়েনি।
তবে হাওয়ায় ভাসা বলটি লুফে নেয়ার সুযোগ ছিল উইকেটরক্ষক রাসেল এনডিয়ানের সামনে। কিন্তু হাটন ব্যাট দিয়ে সেটি সরানোর চেষ্টা করায় পারেননি এনডিয়ান। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা দল আবেদন করে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডের এবং আম্পায়ার দাই ডেভিসও আউটের সিদ্ধান্ত জানান। ফলে এ অদ্ভুত আউট হওয়া বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান বনে যান হাটন।
টেস্ট ক্রিকেটে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডে আউট হওয়া এখনও পর্যন্ত একমাত্র ব্যাটসম্যান হাটনই। ১৯৮৭ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম এই আউটে কাটা পড়েন পাকিস্তানের রমিজ রাজা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬৪ রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শেষ বলে ৯৮ রানে অপরাজিত ছিলেন রমিজ।
শেষ বলে ২ রান নেয়ার চেষ্টায় বাধা দেন ফিল্ডারদের। ফলে পান ১ রান, ৯৯ রানে আউট হন অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডের আইনে। সেই ম্যাচটিও পাকিস্তান হেরেছিল ১৯ রানের ব্যবধানে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানের সংখ্যা ৮ জন।
আর টি-টোয়েন্টিতে সর্বপ্রথম অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আইনে আউট হয়েছেন ইংল্যান্ডের জেসন রয়। ২০১৭ সালের জুনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে ৬৭ রান করে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডের কারণে সাজঘরে ফিরতে হয় রয়কে। টি-টোয়েন্টিতে এই আউটের সংখ্যা মাত্র ২টি।
সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানের ৪ জন ব্যাটসম্যান অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আইনে আউট হয়েছে। এছাড়া ইংল্যান্ডের ৩ এবং ভারত, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র ও মালদ্বীপের একজন করে ব্যাটসম্যান এই নিয়মে কাটা পড়েছেন।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ জন ব্যাটসম্যান এই নিয়মের কারণে আউট হয়েছে। এছাড়া ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, আরব আমিরাত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১ বার করে ঘটেছে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডের ঘটনা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আইনে আউট হওয়া এগার ব্যাটসম্যান
১/ লেন হাটন (ইংল্যান্ড) - বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (টেস্ট, ১৯৫১) ২/ রমিজ রাজা (পাকিস্তান) - বনাম ইংল্যান্ড (ওয়ানডে, ১৯৮৭) ৩/ মহিন্দর অমরনাথ (ভারত) - বনাম শ্রীলঙ্কা (ওয়ানডে, ১৯৮৯) ৪/ ইনজামাম উল হক (পাকিস্তান) - বনাম ভারত (ওয়ানডে, ২০০৬) ৫/ মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান) - বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (ওয়ানডে, ২০১৩) ৬/ আনোয়ার আলি (পাকিস্তান) - বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (ওয়ানডে, ২০১৩) ৭/ বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড) - বনাম অস্ট্রেলিয়া (ওয়ানডে, ২০১৫) ৮/ জেসন রয় (ইংল্যান্ড) - বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (টি-টোয়েন্টি, ২০১৭) ৯/ হাসান রশিদ (মালদ্বীপ) - বনাম কাতার (টি-টোয়েন্টি, ২০১৯) ১০/ জাভিয়ের মার্শাল (যুক্তরাষ্ট্র) - বনাম আরব আমিরাত (ওয়ানডে, ২০১৯) ১১/ দানুশকা গুনাথিলাকা (শ্রীলঙ্কা) - বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (ওয়ানডে, ২০২১)
এসএএস/এমকেএইচ