মেহেরপুরের গাংনীর তেরাইল গ্রামে গোপনে গড়ে তোলা হয়েছে পঙ্গু চিকিৎসালয়। নিয়মিত রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছেন এক অশিক্ষিত যুবক ও তার শাশুড়ি। এতে প্রতারিত হচ্ছেন এলাকার নিরীহ মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে এটা কোনো চিকিৎসা নয় বরং প্রতারণার ফাঁদ।
Advertisement
গাংনীর তেরাইল বাজারের ৫০০ গজ দূরে কৃষক বকুল ও গৃহবধূ মর্জিনার বাড়ি। পাশেই একটি টিনের খুপড়ি ঘর। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি বসতবাড়ি নাকি কোনো গুদাম।
সামনে কোনো সাইনবোর্ড না থাকলেও এ খুপড়ি ঘরেই অন্তত দেড় বছর ধরে চলছে জামাই সাজিত ও শাশুড়ি মর্জিনার পঙ্গু চিকিৎসালয়। এর ভেতরে বয়েছে রোগীদের বিছানা। ভর্তি রয়েছেন বেশ ক’জন পঙ্গু রোগী।
ইট, বাঁশের চটা, গাছের শেকড় বাকড় আর তেল দিয়েই চলছে রোগীদের চিকিৎসা। পুঁথিগত বিদ্যা নেই তাদের। বাপ-দাদার দেখাদেখিতে তারা কথিত ’বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’।
Advertisement
গ্রামের গরীব অসহায় ও নীরিহ লোকজনদেরকে টার্গেট করে দালালরা কমিশনের ভিত্তিতে রোগীদের নিয়ে আসেন এখানে। স্বল্প খরচে আরোগ্য লাভের আশায় অনেকেই ছোটেন চিকিৎসা নিতে। অনুমোদনহীন এ চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি ফিস এক হাজার টাকা। পরে নেয়া হয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে কেউ আরোগ্য লাভ করেছেন কিনা তার খোঁজ মেলেনি। এলাকাবাসীও কোনো কথা বলতে চাননি।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী রিপন আলী ও শাহেরা খাতুন জানান, লোক মারফত খবর পেয়ে আর কম টাকায় চিকিৎসা পাওয়ার আশায় তারা ভর্তি হয়েছেন এখানে। ভর্তি খরচ হিসেবে এক হাজার টাকা আর রোগ উপসমের পর ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। চিকিৎসা নেয়ার পর কেমন বোধ করছেন সে ব্যাপারে কোনো জবাব মেলেনি।
‘চিকিৎসক’ সাজিতের শাশুড়ি মর্জিনা জানান, দেড় বছর যাবত এখানে লোকজন চিকিৎসা নেন। উপকার পায় বিধায় লোকজন আসে। জামাতা সাজিত লেখাপড়া জানে না। তারপরও বাপ দাদাকে দেখে চিকিৎসা শিখেছে। নাটোর জেলাতেও তাদের এ ধরনের চিকিৎসালয় আছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের সাবেক হাড়জোড়া বিশেষঙ্গ আলাউদ্দীন আল আজাদ বলেন, এ ধরনের চিকিৎসা আসলে অপচিকিৎসা। এটা এক ধরনের প্রতারণা। অনেকেই এদের প্রতারণার স্বীকার হয়ে ফিরে আসেন। অনেক সময় জটিল আকার ধারণ করায় আর কিছুই করার থাকে না বলেও জানান তিনি।
Advertisement
মেহেরপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. অলোক কুমার দাস জানান, এ ধরনের চিকিৎসা চলছে তা জানা নেই। বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তদন্ত করে শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আসিফ ইকবাল/এফএ/এমকেএইচ