দেশজুড়ে

আমরা চলে যাচ্ছি, ক্ষমা করে দিবেন

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বড়গাঁও গ্রামে একই রশিতে ফাঁস লাগিয়ে স্বামী-স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার রাতের কোনো এক সময় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। নিহতরা হলেন, বড়গাঁও গ্রামের দুলাই মিয়ার ছেলে যুবায়েল মিয়া (২৫) ও তার পুত্রবধূ লিমা (২০)।এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ওই উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামের যুবায়েল ও তার স্ত্রী লিমা বেগম শনিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রোববার সকালে তাদের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় ও সাড়া শব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজন দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর প্রবেশ করেন। এসময় তারা ঘরের সিলিংয়ের সঙ্গে তাদের ঝুলতে দেখেন। পরে খবর পেয়ে সকাল ৯টায় স্থানীয় গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক আব্দুর রহমান মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠায়।নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামের দুলাই মিয়ার ছেলে যুবায়েল মিয়ার সঙ্গে প্রায় ২ বছর আগে পার্শ্ববর্তী উপজেলা বাহুবলের কালাপুর গ্রামের গবিল হোসেনের মেয়ে লিমা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বাড়ির লোকজন রিমাকে পরকিয়ায় অসক্ত বলে দোষারোপ করলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। ফলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন রিমাকে মেনে নিচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে গত রমজান মাসে লিমা বেগম তার বাবার বাড়ি চলে গেলে স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী যুবায়েল মিয়াও সেখানে ঘর জামাই হিসেবে চলে যান। এ নিয়ে যুবায়েলের সঙ্গে তার পরিবারের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পরে কয়েক দফা সালিশ শেষে যুবায়েলের বাবা পুত্রবধূকে গ্রহণ করে ছেলে এবং পুত্রবধূকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু তারপর থেকে প্রায়ই রিমার সাথে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের ঝগড়া হতো।পানিউমদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, আড়াই বছর আগে তাদের মধ্যে বিয়ে হয়। যুবায়েল মিয়া একজন সাধারণ কৃষক। এক বছর পূর্বে তার স্ত্রী লিমা মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় পিত্রালয়ে চলে যান। কোরবানীর ঈদের পর যুবায়েল তার স্ত্রীকে বাড়িতে আনলে ভালোভাবেই ছিলেন তারা। তাদের কোনো সন্তান নেই। আত্মহত্যার পর তাদের ঘর থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে ‘আমরা যারামগি, মাফ কইরা দিও’ (আমরা চলে যাচ্ছি, ক্ষমা করে দিবেন)।যুবায়েলের বাবা দুলাই মিয়া জাগো নিউজকে জানান, রোববার সকালে ধান কাটার জন্য যুবায়েল ও লিমাকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। যুবায়েল ও লিমা রাতে একসঙ্গে ধান মাড়াই শেষে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে যায়। কেন আত্মহত্যা করেছে তা তিনি বলতে পারেননি।লিমার বাবা বাহুবল উপজেলার কালাপুর গ্রামের গবিল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, আমার মেয়েকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এর আগেও আমার মেয়েকে মারপিট করে তার স্বামীসহ তাড়িয়ে দিয়েছিল। তারা দীর্ঘ দুই মাস আমার বাড়িতে ছিল। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারের মাধ্যামে সালিশ বৈঠক করে ফিরিয়ে নেয়া হয়। আমার ধারণা, তাদেরকে হত্যা করে এভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করবো।স্থানীয় ইউপি মেম্বার আরজত আলী জাগো নিউজকে জানান, যুবায়েল তার পরিবারের দেখাশোনা করতেন। তার এক ভাই বিদেশে এবং ছোট ভাই স্কুলে লেখাপড়া করে। বাবাও বৃদ্ধ। যুবায়েল ও লিমার মধ্যে আগে সমস্যা থাকলেও ইদানিং তারা ভালোভাবেই সংসার করছিলেন।নবীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন জাগো নিউজকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা আত্মহত্যা করেছেন। যে সকল নমুনা ফাঁসির মরদেহে থাকে তার আলামত পাওয়া গেছে। এছাড়াও অন্য কোনো কারণ পাওয়া যায়নি। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা যাবে।সৈয়দ এখলাছুর রহমান/এমজেড/পিআর

Advertisement