দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হবে বুধবার (১০ মার্চ) সকাল থেকে। নির্বাচন উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সাদা, লাল, নীল এবং বিদ্রোহী নীল প্যানেল মিলে চার প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে।
Advertisement
জানা গেছে, নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত সরকারদলীয় আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সাদা প্যানেল এবং জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিক জাতীয়তাবাদী ঐক্য নীল প্যানেলের মধ্যে। যদিও এর বাইরে এবারই প্রথম প্রগতিশীল আইনজীবীদের জাতীয় আইনজীবী জোট লাল (রেড) প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।
আর জাতীয়তাবাদী ঐক্য নীল প্যানেল থেকে আরো একটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। যাকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা বিদ্রোহী নীল বলে আখ্যা দিয়েছেন। সে হিসেবে এবার দেশের সুপ্রিম কোর্ট বারে চার প্যানেলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চার প্যানেলের সভাপতি প্রার্থীর বাইরে থেকেও রয়েছেন একজন নিরপেক্ষ সভাপতি প্রার্থী।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির (২০২১-২২) দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে বুধবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে ও বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) শেষ হবে। এরপর ওই রাতেই ভোট গণনা করা হবে।
Advertisement
এবারের নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্টের ৭ হাজার ৭১৯ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুরে ১ ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এই সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থী হয়েছেন ৫১ জন।
এবারের নির্বাচনে সরকার সমর্থক আইনজীবীদের সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) সভাপতি পদে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু ও সম্পাদক পদে আব্দুল আলীম মিয়া জুয়েলের নেতৃত্বে একক প্যানেল দিলেও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দুটি প্যানেল দেয়া হয়েছে।
মূল বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে মো. ফজলুর রহমান ও সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নির্বাচন করছেন।
যদিও নিজেদেরকে বিএনপিপন্থী নীল প্যানেল দাবি করে বিদ্রোহী প্যানেল থেকে সভাপতি পদে সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান ও সম্পাদক পদে মির্জা আল মাহমুদ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন।
Advertisement
বিএনপির বিদ্রোহী প্যানেল দিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মতিন খসরু-জুয়েল প্যানেল ও ফজলুর রহমান-কাজল প্যানেলের মধ্যে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিরোধের ফলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
এর বাইরেও প্রগতিশীল আইনজীবীদের পক্ষ থেকে রেড প্যানেল নামে একটি প্যানেল দেয়া হলেও ১৪টি পদে প্রার্থী দিতে পারেনি এ প্যানেল। রেড প্যানেল থেকে সভাপতি পদে কে এম জাবির ও সম্পাদক পদে মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে তার আহ্বায়ক হচ্ছেন সাবেক বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান। যিনি প্রার্থী ও ভোটারদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণের বুথ তৈরিসহ সার্বিক প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
এই নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী ‘দলীয় প্যানেলে’ প্রার্থীদের পরিচয় দিয়ে ভোট চাওয়ার সুযোগ নেই। তবে ভোটারদের মুখে মুখে ভিন্ন ভিন্ন প্যানেল পরিচিতি পাচ্ছে। যেখানে আওয়ামীপন্থী প্রার্থীরা ‘সাদা প্যানেল’ হিসেবে এবং বিএনপিপন্থী প্রার্থীরা ‘নীল প্যানেল’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। এর বাইরে বিএনপিপন্থী বেশ কয়েকজন আইনজীবী একটি ‘প্যানেল’ নিয়ে এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আর ৮টি পদে প্রার্থী দিয়েছেন প্রগতিশীল আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয় আইনজীবী জোট মনোনীত ‘লাল প্যানেল’।
আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেল
আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে এবং অ্যাডভোকেট আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন, সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা এবং অ্যাডভোকেট মো. আলী আজম, কোষাধ্যক্ষ ড. মো. ইকবাল করিম, সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার সাফায়েত সুলতানা রুমি এবং অ্যাডভোকেট নুরে আলম উজ্জ্বল, সদস্য পদে অ্যাডভোকেট মিন্টু কুমার মন্ডল, ব্যারিস্টার মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মো. সানোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট এবিএম শিবলী সালেকীন, অ্যাডভোকেট মো. সিরাজুল হক, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান রোমান।
মূল বিএনপিপন্থী নীল প্যানেল
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানকে সভাপতি পদে এবং সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া দুটি সহসভাপতি পদে জয়নাল আবেদিন তুহিন ও জালাল আহমেদ, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহমুদ হাসান ও রাশিদা আলম ঐশী, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মাহবুব এবং সাতটি সদস্য পদে মনজুরুল আলম সুজন, শফিকুল ইসলাম শফিক, গোলাম মোহাম্মদ জাকির, পারভীন কাওসার মুন্নি, রেদওয়ান আহমেদ রানজিব, নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব ও ইফতেখার আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন।
বিএনপির বিদ্রোহী (বিএনপিপন্থী আরেক) প্যানেল
এই প্যানেলে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট ওয়ালিউর রহমান খান এবং সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা এবং অ্যাডভোকেট সাবিনা ইয়াসমিন লিপি, কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান সম্রাট, সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট জুলফিকার আলী জুনু এবং অ্যাডভোকেট মো. সুলতান মাহমুদ, সদস্য পদে অ্যাডভোকেট শাফিউর রহমান শাফি, মো. মুনির হোসেন, অ্যাডভোকেট একেএম মুক্তার হোসেন, অ্যাডভোকেট মহিত উদ্দিন জুবায়ের, আকবর হোসেন, ওয়ালিউর রহমান শুভ ও নাজমুল হাসান প্রার্থী হয়েছেন।
রেড প্যানেল (লাল)
এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে কে এম জাবির, সম্পাদক পদে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি পদে নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. বদিউজ্জামান তপাদার, সহ-সম্পাদক পদে মো. সাজ্জাদ হোসেন, সদস্য পদে শহিদুল হক, এস কে এম আনিসুর রহমান খান, জহিরুল আলম বাবর প্রার্থী হয়েছেন।
এছাড়াও দলের বাইরে থেকে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অ্যাডভোকেট মো. ইউনুস আলী আকন্দ।
এফএইচ/ইএ/জেআইএম