আসন্ন পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার সাম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা প্রচারণার পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। প্রত্যেক প্রার্থীই এখন গণসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ পৌর নির্বাচনী মাঠ এখন সরগরম। দোকান-পাট, হাট-বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এখন নির্বাচন কেন্দ্রীক আলোচনায় মুখর সবাই। আলোচনা শুরু হয়েছে কোন দল থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন। নতুন কোনো চমক আসছে কিনা!সিরাজগঞ্জ পৌর নির্বাচনে যে সকল প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কে এম হোসেন আলী হাসান, সিরাজগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসহাক আলী, আওয়ামী লীগ নেতা শিল্পপতি সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র সেলিম আহম্মেদ। অপরদিকে, বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পদচ্যুত মেয়র অ্যাড. মোকাদ্দেস আলী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইদুর রহমান বাচ্চু ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান টিআর এম নুরই আলম হেলাল। উভয় দলের নেতৃবৃন্দ জানান, তাদের দলের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান। পৌর সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কে এম হোসেন আলী হাসান জাগো নিউজকে জানান, তিনি জেলা আওয়ামী লীগের ৯ বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একই সঙ্গে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিরাজগঞ্জ শাখার সেক্রেটারি, মওলানা ভাষানী কলেজে ও হৈমবালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। শহরের আলীয়া মাদ্রাসার সহ-সভাপতিসহ শহর সমাজ সেবা প্রকল্প সমন্বয় পরিষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়াও আরও অনেক সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তার এসব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবারের নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে আবারো প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে আগ্রহী। নির্বাচিত হলে তিনি প্রথমেই সিরাজগঞ্জ শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন করাসহ পৌর কবরস্থান, মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ পৌরকর সহনীয় পর্যায়ে হকার পুনঃবাসন করবেন। সিরাজগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র প্রার্থী ইসহাক আলী জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জেলার ডেপুটি কমান্ডের দায়িত্ব পালন করাসহ ৬৯ এর ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাসের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এ সকল বিবেচনা করে দল তার উপর আস্থা রেখে মনোনয়ন প্রদান করবে বলে তিনি আশা করেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হলে পৌরসভার সকল রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নসহ শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত টাকা খালির সংস্কার, মাদক নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় দোকানপাট করে ছিন্নমুল হকার ও অসহায়দের পুনর্বাসন পৌরকর সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। আওয়ামী লীগ নেতা শিল্পপতি সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা জাগো নিউজকে বলেন, ছয় বছর সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি থাকাকালিন সময় চেম্বর ভবন নির্মাণ শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শহরের সবুজ কানন স্কুল ও হৈমবালা স্কুল ভবন নির্মাণ করেছেন। এছাড়া আরো অনেক মসজিদ মাদ্রাসা ও স্কুল কলেজে সহযোগিতা করেছেন। বেকার সমস্যা সমাধান কল্পে সিরাজগঞ্জে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন। যেখানে সহস্রাধিক নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়া অসহায় দুস্থদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করনের জন্য শহরে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় নির্মাণ করার কারণে সেখানে প্রতিদিন শতশত নারী পুরুষ ও শিশু বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এ সকল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। দল যদি তার এসব বিবেচনা করে মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচিত হয়ে সিরাজগঞ্জ পৌরসভাকে আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।সিরাজগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র সেলিম আহমদ জাগো নিউজকে জানান, বিগত নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র মোকাদ্দেস আলীকে অপসারণ করে তাকে মেয়র পদে দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়। দ্বায়িত্ব নিয়ে তিনি শহরের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার, শহরকে অন্ধকার দূর করে আলোকিত করাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। একই সঙ্গে শহরের কোথাও ব্যানার ফেস্টুন না থাকায় শহরের চেহারাই পাল্টে দিয়েছেন। এ সকল কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমানে তিনি পৌরবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। এ বিবেচনায় দল যদি তাকে মনোনয়ন প্রদান করে, নির্বাচিত হয়ে সিরাজগঞ্জকে একটি আধুনিক শহর রূপে গড়ে তুলতে তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করবেন বলে উল্লেখ করেন। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিগত নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র অ্যাড. মোকাদ্দেস আলী বলেন, বিগত নির্বাচন আওয়ামী লীগের সরকারের অধীন হলেও তিনি বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু ভোটে নির্বাচিত হবার পর থেকে তাকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে তাকে জনগণের সেবা করা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিহিংসামূলক তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এবারে দল নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি আবারও মেয়র পদে নির্বাচন করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে নির্বাচনে জয়লাভ করলে জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন বলেও তিনি জানান। সাবেক ছাত্র নেতা সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের জিএস সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের দুবার নির্বাচিত সহসভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জাগো নিউজকে বলেন, সিরাজগঞ্জে পাঁচ হাজারের অধিক নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা চলেছে। তার বিরুদ্ধেও ২০টির বেশি মামলা রয়েছে। প্রতিটি মামলাই রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে তিনি মানুষের বিপদে আপদে তাদের সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন। যে কারণে সিরাজগঞ্জ পৌরবাসী তাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে আশা করছেন। এবারে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়র পদটি নিজেদের দখলে আনতে মরিয়া। তাদের দাবি বর্তমান সরকার দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার কারণে ভোটাররা তাদের পক্ষেই রায় দেবেন। অপরপক্ষে বিএনপি এবারেও মেয়র পদটি ধরে রাখতে পারবে বলে মনে করছে। তাদের দাবি বেশিরভাগ সময় সিরাজগঞ্জ পৌরসভার পদটি বিএনপির দখলে ছিল এবারও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হলে পৌরবাসী বর্তমান সরকারের অগণতান্ত্রিক শাসনের বিপক্ষে রায় দেবেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দিনভর নানা কাজ করে যাচ্ছেন, ঠিক উল্টো চিত্র বিএনপির। তাদের কোনো প্রার্থীকে এখন পর্যন্ত মাঠে দেখা যাচ্ছে না। শুধু মেয়র প্রার্থীরাই নন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচনকে সামনে রেখে উৎসবের আমেজে থাকলেও বিএনপি অনেকটাই পিছিয়ে তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নিয়ে।এমজেড/পিআর
Advertisement