বিনোদন

মেয়ের আত্মহত্যার পর অভিনয় ছেড়ে দেন চিত্রনায়ক শাহীন আলম

অভিনয়ের নেশাটা ছিল কৈশোর থেকেই। সেজন্যই নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন মঞ্চে। এরপর ১৯৮৬ সালে যুক্ত হন চলচ্চিত্রে, নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিভা অন্বেষণের প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে। ১৯৯১ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমা ‘মায়ের কান্না’।

Advertisement

এরপর বেশ লম্বা সময় সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ছিলেন সময়ের সবচেয়ে ব্যস্ত অভিনেতাদের একজন। শাহীন আলম যেমন একক নায়ক হিসেবে সিনেমা করেছেন তেমনি তাকে দেখা গেছে অসংখ্য সিনেমায় দ্বিতীয় নায়কের চরিত্রেও।

গত ৮ মার্চ মৃত্যুবরণ করা এ অভিনেতা শেষ জীবনে অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন। মন দিয়েছিলেন পারিবারিক ব্যবসা ও ধর্মকর্মে। গুলিস্তানে কাপড়ের ব্যবসায় তার ছবি ভাইরাল হয়েছিল।

কেন অভিনয়ের রঙিন দুনিয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন শাহীন আলম? সেই কৌতূহল অনেকের মনে। বেঁচে থাকতে তার জবাব তিনি নিজেই দিয়ে গেছেন।

Advertisement

একটি ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে শাহীন আলম জানান, শাহীন আলমের রূপালি পর্দা ত্যাগ করার পেছনে একটি ঘটনা জড়িয়ে আছে। সেটি হলো তার প্রাণপ্রিয় মেয়ের আত্মহত্যা।

এসএসসিতে ভালো ফল করতে না পারার অভিমানে শাহীন আলমের একমাত্র মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। বাবা হিসেবে সেই ঘটনা মন থেকে মুছতে পারেননি তিনি কোনো দিন। মেয়েকে হারানোর পর পরই বদলে যেতে থাকেন তিনি। নামাজ আদায়ে মনোযোগী হন। আমূল পরিবর্তন ঘটে তার জীবন যাপনের।

এছাড়া আর দুটি কারণকে তিনি দেখিয়েছেন অভিনয় ছেড়ে দেয়ার পেছনে। তার একটি হলো ধর্মচিন্তা। তিনি বলেন, ‘আমি তো মুসলমান। পরকালে বিশ্বাসী। আমাকে একদিন না একদিন ওই সর্বশক্তিমানের কাছে ফিরতেই হবে। তখন কী জবাব দেব? একটা মানুষ কত দিন বাঁচে? ধরুন খুব বেশি হলে ১০০ বছর বাঁচব। এরপর তো আল্লাহর কাছে গিয়ে জবাবদিহি করতে হবে।

তাই আমি বলব, আগে পরকালের হিসাবের খাতাটা ঠিক রাখতে হবে। সিনেমা থেকে সরে এসেছি।’

Advertisement

আরেকটি কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকাই ছবিতে অশ্লীলতা তখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। সিনেমা জগৎ চলে গেল প্রযোজকদের হাতে। নির্মাতা ও শিল্পীরা তাদের পুতুলমাত্র। তখন অভিনয় করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন শাহীন আলম। কারণ তাকে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য চাপ দেওয়া হতো। রাজি না হলে পরে সেগুলোতে কাটপিস জুড়ে দেওয়া হতো।

এমন পরিস্থিতিতে পরিবার ও বন্ধু মহলে সমালোচনার শিকার হতেন তিনি। একদিন তার বড় ভাই হজ পালন করে এসে অনুরোধ করলেন, যেন সিনেমা জগৎ ছেড়ে দেন শাহীন আলম।

ভাইয়ের অনুরোধে তিনিও উপলব্ধি করলেন। পরে সিনেমা থেকে নিজেকে গুটিয়ে পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মন দিলেন।

প্রসঙ্গত, শাহীন আলম অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে- ‘ঘাটের মাঝি’, ‘এক পলকে’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘প্রেম প্রতিশোধ’, ‘টাইগার’, ‘রাগ-অনুরাগ’, ‘দাগি সন্তান’, ‘বাঘা-বাঘিনী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আরিফ লায়লা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘অজানা শত্রু’, ‘গরিবের সংসার’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘আমার মা’, ‘পাগলা বাবুল’, ‘তেজী’, ‘শক্তির লড়াই’, ‘দলপতি’, ‘পাপী সন্তান’, ‘ঢাকাইয়া মাস্তান’, ‘বিগবস’, ‘বাবা’, ‘বাঘের বাচ্চা’, ‘বিদ্রোহী সালাউদ্দিন’, ‘তেজী পুরুষ’ ইত্যাদি অন্যতম।

এলএ/এমএস