শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতার’ সম্মাননা পাচ্ছেন রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার মিফতাহুল জান্নাত হিরা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই নারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসএস পড়ছেন।
Advertisement
হাজারো প্রতিবন্ধিকতা পাড়ি দিয়ে আজ তিনি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা। তার জীবনের সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা তিনি জন্ম থেকেই অন্ধ। কিন্তু তিনি সেটাকেও জয় করেছেন।
মিফতাহুল জান্নাত বলেন, এইচএসসি পাসের পর ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য যখন বগুড়া থেকে ঢাকায় আসি তখন অন্ধকার জগত নিয়ে অচেনা অজানা শহরে একাই ছিলাম আমি। তারপরও সব বাধা দূর করে নিজের অটল বিশ্বাসে অবিচল থেকেছি। মাথায় ছিলো এই যাত্রায় হেরে গেলে চলবে না, জয়ী আমাকে হতেই হবে। জীবনের সকল অন্ধকার মাড়িয়ে আলো আনতে তাই বদ্ধপরিকর ছিলাম। এক সময় সফলতা এসে ধরা দেয় আমার হাতে।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। একসময় মেধা তালিকা প্রকাশ হলো। সেখানে প্রথমেই ছিল আমার নাম।
Advertisement
জান্নাতের বাবা আব্দুস সাত্তার পেশায় একজন কৃষক। আর মা নূরজাহান বেগম গৃহিণী। তাদের পরিবারে ৪ ভাই ৫ বোনের মধ্যে তিন বোনই জন্মান্ধ। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তিন বোনের মধ্যে বড় বোন রেশমা খাতুন বাবা-মায়ের সাথেই থাকেন। আর মেজ বোন লাভলী খাতুন এখন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ট্রাস্টের রির্সোচ মোভিলাইজার হিসেবে ঢাকায় কর্মরত আছেন।
জান্নাত জানান, তার জীবনের গল্পটা অন্যরকম। তার জন্মাদ্ধ বোনদের সহযোগিতা পেয়েছেন সব সময়। তারাই সাহস দিতেন। যুদ্ধ জয় করতে শিখিয়েছেন।
অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত তরুণী জান্নাত বর্তমানে লিবারেল প্রতিবন্ধী পরিষদের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। তার শুদ্ধ শব্দ চয়ন আর বাচনভঙ্গির কারণে তিনি অন্য সাধারণ ছেলেমেয়েকেও পেছনে রেখে এগিয়ে গেছেন। দুই বছর আগে জান্নাত প্রথম নারী হিসেবে শ্যাডো পার্লামেন্টের নারী এমপি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
জান্নাতের শুভাকাঙ্ক্ষীদের একজন কথাসাহিত্যিক রিপন আহসান ঋতু বলেন, আমি বিশ্বাস করি জান্নাত এদেশের প্রতিবন্ধীদের আইকন হিসেবে আগামী দিনে আলোকবার্তা ছড়িয়ে হতাশাগ্রস্ত প্রতিবন্ধীদের আলোর পথ দেখাবে।
Advertisement
সোমবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জান্নাতসহ অন্য ৪ জন জয়িতার হাতে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।
জান্নাত জানান, তার পুরস্কারের এই অর্থ তিনি নিজের অসহায় পরিবারের জন্য ব্যয় করবেন।
এফএ/জেআইএম