ফেনীর শমসের গাজীর সুড়ঙ্গপথ সম্পর্কে অনেকেই হয়তো কমবেশি জানেন! ছাগলনাইয়ার চম্পকনগরে ভারতের সীমান্ত এলাকাটি মূলত শমসের গাজীর স্মৃতি বিজড়িত স্থান।
Advertisement
সেখানে আছে শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ, শমসের গাজী বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট, দীঘিসহ অনেক কিছু। তবে তার প্রাসাদসহ অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ ভারতের ত্রিপুরার মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে।
ফেনীর ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এ স্থানটি অন্যতম। সেখানে গেলে পর্যটকরা শমসের গাজীর সুড়ঙ্গপথে ঢুঁ না মেরে কখনো ফেরেন না। সুড়ঙ্গপথ পানে তাকালেই রহস্যময় এক অনুভূতির সৃষ্টি হয় সবার মাঝে, জাগে কৌতূহল। কেন জমিদার শমসের গাজী এ সুড়ঙ্গপথটি তৈরি করেছিলেন?
শমসের গাজী কৃষক-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জন করেন জমিদারি। সে সময় তিনি চোর ডাকাত ও জলদস্যুদের রুখতে এক শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তোলেন। বর্তমান ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
Advertisement
তার পিতার নাম পীর মুহাম্মদ মতান্তরে পেয়ার মুহাম্মদ খান এবং মাতার নাম কৈয়্যারা বিবি। তিনি প্রথম জীবনে এক জমিদারের ক্রীতদাস ছিলেন। তারপর নিজের জ্ঞান, শক্তি, দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনিও একসময় হয়ে ওঠেন জমিদার। টানা এক যুগ ত্রিপুরা রাজ্য শাসন করেন এই বীর। ভাটির বাঘ বলে পরিচিতি লাভ করেন।
বহু যুদ্ধক্ষেত্র দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন বীর শমসের। শত্রুসেনা বিনাশ করতে কখনো পিছপা হননি। তার কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ইংরেজ বেনিয়ারা। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ঐপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসন প্রতিহত করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শমসের গাজী নবাব সিরাজুদ্দৌলার পর তিনিই ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে প্রথম নিহত হন।
বহু কৃতিত্ব রয়েছে তার। মৃত্যুর আগে তিনি দুর্গ ও রাজধানী গড়েন। প্রতিরক্ষার জন্য আধুনিক রণকৌশলে সাজান পুরো এলাকা। ফেনীর ছাগলনাইয়ার চম্পকনগর ও জগন্নাথ সোনাপুরের বর্তমান ভারত সীমান্ত এলাকাটি শমসের গাজীর স্মৃতি বিজড়িত স্থান। এখানেই রয়েছে শমসের গাজীর সুড়ঙ্গপথ ও শমসের গাজীর দীঘি।
তিনি তার রাজকীয় বাড়ির পাশে ৪.৩৬ একর জায়গা জুড়ে দীঘি এবং একটি সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ করেন। তার অন্যান্য স্থাপত্য নিদর্শনসমূহের মধ্যে শমসের গাজীর দীঘির সুড়ঙ্গপথ অন্যতম। বর্তমানে জরাজীর্ণ সুড়ঙ্গপথটি শমসের গাজীর স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে টিকে আছে। তার তৈরি দুর্গটি এখন বিলুপ্ত।
Advertisement
তবে সেখানে শমসের গাজীর স্মৃতিবিজড়িত অনেক কিছুই রয়ে গেছে। তার স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট নামক পর্যটনকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। ভ্রমণপিপাসুরা গিয়ে সেখানকার বাঁশের তৈরি কেল্লায় থাকতে পারবে। মনোরম সুন্দর স্থানটিতে সবকিছু বাঁশের তৈরি, রয়েছে নান্দনিকতার ছাপ।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে শ্যামলী, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন, এস আলম, কেয়া ও সৌদিয়া পরিবহনের বাসে ফেনী যেতে হবে। এ ছাড়াও ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে মহানগর গোধূলি ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে ফেনী যেতে পারবেন। এরপর ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা থেকে স্থানীয় পরিবহণে শমসের গাজীর দীঘির সুড়ঙ্গপথে যেতে হবে।
যেখানে থাকবেন
ফেনী জেলায় হোটেল বিলাস, হোটেল আল করিম, হোটেল গাজী ও হোটেল মিড নাইট হোটেল রয়েছে। শমসের গাজীর দীঘির সুড়ঙ্গ পথের কাছে চম্পক বাজারে হালকা চা-নাস্তার দোকান রয়েছে। এছাড়া ফেনী শহরে ভালমানের রেস্তোরাঁ খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে।
ফেনী জেলার যত দর্শনীয় স্থান
ছাগলনাইয়া উপজেলায় শমসের গাজীর অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে আছে দীঘি, সীমানা খুঁটি, বাঁশের কেল্লা, কৈয়ারা দীঘি ও ফেনী শহরে বিদ্যামান জগনাথ মন্দির অন্যতম।
ফেনী জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রাজাঝির দীঘি, প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি ও আব্দুস সালাম স্মৃতি জাদুঘর ইত্যাদি।
জেএমএস/জিকেএস