ছোট্ট একটি পদক্ষেপ, বদলে দিতে পারে অনেক কিছু। ভেঙে দিতে পারে সমাজের অনেক মন্দ প্রচলিত ধারণা। সংযোজন করতে পারে অনেক সাফল্য। তেমনি এক পদক্ষেপ নিয়েছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখী টিভি।
Advertisement
আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে চ্যানেলটিতে সংবাদ পাঠ করতে দেখা যাবে একজন হিজড়াকে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে এই প্রথমবার কোনো ট্রান্সজেন্ডার নারী এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলেন। তার নাম তাসনুভা আনান শিশির।
সেই সঙ্গে আরও একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী সুযোগ পেলেন বৈশাখী টিভির নাটকে অভিনয় করার। তার নাম নুসরাত মৌ। যাকে পর্দায় প্রথম দেখা যাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে। ধারাবাহিক নাটক ‘চাপাবাজ’র একটি পর্বে মৌকে দেখা যাবে। ৮ মার্চ রাত ৯টা ২০ মিনিটে নাটকটি প্রচারিত হবে।
খবরটি প্রকাশ্যে আসে গতকাল শুক্রবার (৫ মার্চ)। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈশাখী টিভি এ খবরটির ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই শুভেচ্ছায় ভাসছেন শিশির।
Advertisement
সেই সঙ্গে প্রশংসিত হচ্ছে বৈশাখী টিভিও। তাদের চমৎকার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
গতকাল থেকেই ফেসবুকে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে শিশিরের সংবাদ পাঠিকা ও মৌয়ের অভিনেত্রী হওয়ার খবরটি।
এক নারী খবরটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘তারা ভিন্ন নয়, তারাও আমাদের মতো আল্লাহর সৃষ্টি, মানুষ। সকল ক্ষেত্রে তাদের ও আমাদের মতো সমান অধিকার প্রাপ্য। ভালোবাসা।’
আরেকজন অভিনেতা রাশেদ সীমান্তের পোস্টে মন্তব্য করেছেন, ‘শুভ উদ্যোগ। জেনে ভালো লাগলো। এভাবেই ছেলে, মেয়ে বা তৃতীয় লিংগের পরিচয় ছাপিয়ে মানুষ হোক মূল্যায়িত। সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’
Advertisement
বৈশাখী টিভিকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাশেদের পোস্টে আরও এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘দৃষ্টিভঙ্গি, মেন্টালিটি একটু পজিটিভ হলেই পৃথিবীটা আরো অনেক সুন্দর হতো। ধন্যবাদ বন্ধু তোমাকে আর বৈশাখী টেলিভিশনকে। লিঙ্গ, অবস্থান, সম্পদ, ক্ষমতা এগুলোকে দূরে ঠেলে ভালো মানুষ পরিচয়কে উপজীব্য করা প্রত্যেকটা মানুষকে স্যালুট জানাই।’
বৈশাখী টিভির ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈশাখী টেলিভিশন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই বছর, স্বাধীনতার মাস মার্চে নারী দিবস উদযাপনের আগে সংবাদ বিভাগ ও নাটকে দুজন ট্রান্সজেন্ডার নারীকে যুক্ত করেছে।
বৈশাখী টেলিভিশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান সম্পাদক টিপু আলম মিলন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডাররাও আমাদের সমাজেরই অংশ। অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তাদের মেধাও আমাদের সম্পদ। সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আমরাই লাভবান হবো। তারাও উন্নত জীবনের দেখা পাবেন। নাগরিক হিসেবে দেশ ও সমাজে ভূমিকা রাখতে পারবেন। সে ভাবনা থেকেই আমরা উদ্যোগটি নিয়েছি।’
তাসনুভা আনান শিশির গণমাধ্যমকে জানান, ওই টেলিভিশনটিতে তিনি নাটকের কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে তার উচ্চারণ উপস্থাপন দেখে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ তাকে অডিশন দিতে বলে। পরে অডিশন দিয়ে সংবাদ পাঠক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। বৈশাখী টিভিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিশির।
জীবনভর মানুষের কাছে বঞ্চনার শিকার হওয়া মৌ এবার নাটকের অভিনেত্রী। তিনিও আপ্লুত। বৈশাখী টিভির প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই তারও।
এলএ/এমএস