জাতীয়

একই মঞ্চে ফাঁসি হলেও কেউ কারো মুখ দেখেননি

একই সময়ে একই মঞ্চে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হলেও ফাঁসির মঞ্চে ওঠানোর সময় কেউ কারো মুখ দেখেননি। তাদের আগেই কালো কাপড়ে চোখ-মুখ বেঁধে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। ফাঁসি কার্যকরের আগে তারা দুজনেই দোয়া কালাম পড়তে পড়তে ফাঁসির মঞ্চে ওঠেন।নিয়ম অনুযায়ী ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে আসার পর জমটুপি (কালো কাপড়) পড়ানো হ্য়। তবে দুজনকে একই মঞ্চে এক সঙ্গে ফাঁসি কার্যকর করার জন্য আগে থেকেই তাদের জমটুপি দিয়ে চোখ মুখ বেঁধে নিয়ে আসা হয়। ফাঁসির মঞ্চে উঠতে বলা হলে সাকা ও মুজাহিদ দুজনেই শান্তভাবে মৃদু স্বরে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ দরুদ পড়ে ফাঁসির মঞ্চে ওঠেন।‘তারা নির্বিকার থেকেছেন, কোনো উতপ্ত বাক্যবিনিময় করেননি, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের ফাঁসির মঞ্চ থেকে নামানো হয়’ বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিনিধি ডিসি-ডিবি (নর্থ) শেখ নাজমুল আলম। রাত পৌনে ২টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।এর আগে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাকা ও মুজাহিদ শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের প্রাণভিক্ষার লিখিত আবেদন করেন। পরে দুপুর ৩টার দিকে দুই ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান ও মো. আরিফ প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন।বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘুরে আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। সেখান থেকে তা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতি মানবতাবিরোধী দুই অপরাধীর প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন। তবে সাকা চৌধুরীর ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি পুরোপুরি ভোগাস (ফালতু)। আমার বাবা (সাকা চৌধুরী) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি।শেষ দেখার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের ডাকে শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন সাকার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা। সাক্ষাৎ শেষে কারাগার ছেড়ে যাওয়ার সময় সাকার ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি পুরোপুরি ফালতু। আমার বাবা (সাকা চৌধুরী) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি। প্রাণভিক্ষার এমন কাগজ এই সরকারের আমলে আরো বের হবে। বর্তমান সরকার তাকে (সাকা চৌধুরী) নির্বাচনে হারাতে না পেরে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করছে বলেও মন্তব্য করেন হুম্মাম কাদের।সূত্র জানায়, শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় সাকা চৌধুরীর পরিবারের ১৮ জন সদস্য কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কারাগারে প্রবেশ করেন। কারাগারের ভেতরে প্রবেশকারীদের মধ্যে ছিলেন সাকার স্ত্রী, দুই ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই, দুই ভাই, বোন, দুই ভাবী, বড় ছেলের বউ, শালিকা, ভাগ্নী, চাচী, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী প্রমুখ।উল্লেখ্য, বুধবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে মৃত্যুদণ্ডই তাদের শেষ ভাগ্য নির্ধারিত হয়।জেইউ/বিএ

Advertisement