অর্থনীতি

ছুটেই চলেছে মুরগি, ২২০ টাকার সোনালী ৩৬০

হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারগুলোতে অস্থির হয়ে উঠেছে মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ টাকা পর্যন্ত। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহ দাম বাড়ার মাধ্যমে মুরগি এখন অনেকটাই নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।

Advertisement

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা।

ব্রয়লার মুরগির থেকেও দ্রুত গতিতে ছুটছে পাকিস্তানি সোনালী বা কক মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালী মুরগির দাম বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর দুই সপ্তাহ আগে এই মুরগির দাম ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালী মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ টাকা এবং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১২০ টাকা।

মুরগির এমন দাম বাড়ার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, গরুর মাংস আমাদের কপাল থেকে অনেক আগেই উঠে গেছে। এখন যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে মুরগিটাও কপাল থেকে উঠে যাবে। এত দাম দিয়ে তো আমাদের পক্ষে মুরগি কিনে খাওয়া সম্ভব না।

Advertisement

তিনি বলেন, আমাদের পক্ষে রোজ রোজ মাংস খাওয়া সম্ভব না। ছেলেমেয়েদের আবদার পূরণ করতে সপ্তাহে একদিন মাংস খাওয়ার চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রে আমাদের ভরসা ব্রয়লার মুরগি। ব্রয়লার মুরগির দাম কম থাকলে আমরা শান্তি পাই। আর দাম বাড়লে আমাদের কষ্ট বেড়ে যায়।

মুরগির দাম শুনে হতাশা প্রকাশ করে রামপুরা বাজার থেকে বেসরকারি চাকরিজীবী ইসমাইল হোসেন বলেন, বাসা থেকে সোনালী মুরগি কিনে নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু এক কেজি সোনালী মুরগি কেউ ৩৫০ টাকা, কেউ ৩৬০ টাকা চাচ্ছেন। আগে তো এই মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি কিনেছি। যে হারে দাম বেড়েছে তাতে সোনালী মুরগি কেনা সম্ভব না। তাই ১৬৫ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনে নিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের বাজার কোনো নিয়মনীতির মধ্যে চলে না। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামাফিক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। চাল, তেলের অস্বাভাবিক দামের মধ্যে এখন মুরগির দাম হু হু করে বাড়ছে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য যেন কেউ নেই।

মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মিন্টু বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। বাড়তি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে, তাই বাড়তি দামে বিক্রি করছি। পাইকারি বাজারে এখন মুরগি কম আসছে। শুনছি খামারে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কম হচ্ছে।

Advertisement

তিনি বলেন, যে হারে মুরগির দাম বাড়ছে তাতে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা হয়ে যেতে পারে। আর সোনালী মুরগির কেজি ৪০০ টাকা হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ কিছুদিন আগে যে সোনালী মুরগির কেজি ২২০ টাকা ছিল, এখন তা ৩৬০ টাকা হয়ে গেছে।

রামপুরার ব্যবসায়ী মো. কাজল বলেন, ব্রয়লার মুরগির থেকে অনেক বেশি হারে সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে। এর কারণ এখন অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানের জন্য সোনালী মুরগি কেনা হচ্ছে। তাছাড়া মানুষের বাইরে বের হয়ে খাবার কিনে খাচ্ছে। ফলে রেস্টুরেন্টগুলোও প্রচুর মুরগি কিনছে। আবার খামারে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কমে গেছে। সবমিলে সব ধরনের মুরগির দাম বেড়ে গেছে।

মুরগির দামে অস্বস্তি দেখা দিলেও বাজারে আগের মতোই ভরপুর রয়েছে শীতের সবজি। ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি বিরাজ করছে সবজির দামে। তবে বাজারে নতুন আসা ঢেঁড়স, পটল ও করোলার দাম বেশ চড়া। বাজার ও মানভেদে এই তিনটি সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

অপরদিকে আগের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। শশার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা।

এছাড়া মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা, বেগুনের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাঁজরের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ফুলকপি, বাঁধাকপির ও লাউয়ের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস।

সবজির মতো সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম। খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকা। এক ডজন ডিম পাওয়া যাচ্ছে ৯০ টাকায়।

সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, কম দামে সবজি খাওয়ার দিন আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। পাকা টমেটোর সরবরাহ কিছুটা কমলেও দেখবেন সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে টমেটো কোল্ডস্টোরেজে যাওয়া শুরু হয়ে গেছে। আমাদের ধারণা এ মাস শেষ হওয়ার আগেই সবজির দাম বেড়ে যাবে।

এমএএস/বিএ/এমএস