মো. মুনজুরুল ইসলাম ১৯৯০ সালের ২ নভেম্বর বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর উপজেলার জালশুকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. মাহফুজার রহমান, মা জাহানারা বেগম। জালশুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, চাঁচাইতারা মাদলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে মাধ্যমিক এবং বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর ২০০৯-২০১০ সেশনে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
Advertisement
সম্প্রতি তার বিসিএস জয়ের গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত-
জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?মুনজুরুল ইসলাম: আমার ছোটবেলা ছিল স্বপ্নের মতো। দুরন্ত শৈশবে খেলাধুলা করে, মাছ ধরে, গ্রামের কাদা মাটিতে বড় হয়েছি। তবে পড়াশোনায় ছিল পরিবারের কড়া শাসন। সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।
জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধতা ছিল কি?মুনজুরুল ইসলাম: না। তবে আমার জীবনে ফাইনালি ক্যাডার হওয়ার পেছনে কতগুলো নিয়ামক কাজ করেছে। ক্লাসে ফার্স্ট হয়েও ক্লাস ফাইভে বৃত্তি না পাওয়া, এসএসসিতে এ প্লাস না পাওয়া। শেষে এসএসসির পর বিজ্ঞান থেকে মানবিক বিভাগে ভর্তি হওয়া। সব কিছুতে মেন্টর ছিলেন আমার মা।
Advertisement
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মুনজুরুল ইসলাম: ২০০৯-২০১০ সেশনে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের ভর্তির পর থেকে নিজের স্বপ্নগুলো বড় হতে থাকে। অনার্সের শেষদিকে বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করেছিলাম।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই- মুনজুরুল ইসলাম: অনার্স শেষ করে মাস্টার্স শেষ করতে করতে চোখের পলকে ৩৫, ৩৬, ৩৭তম বিসিএস চলে যায়। ৩৫তম বিসিএসে প্রিলিতে পাস করলেও রিটেনে বাদ পড়ি। আসলে একাডেমিক পড়াশোনায় কোনো কিছু ঠিকমতো হচ্ছিল না। এর মাঝে সব পরীক্ষায় শুধু ফেল আর ফেল! এরপর একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করে ২০১৬ সালে টানা পড়াশোনা। ফলে ২০১৭ সালে সব পরীক্ষায় টিকতে শুরু করি। পুলিশের এসআই, সার্জেন্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জয়েন করবো কি-না চিন্তায় পড়ে যাই।
আসলে বিসিএসই ছিল আমার ধ্যান-জ্ঞান। ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর পুলিশ সার্জেন্ট হিসাবে জয়েন করি। ফলে সবাই ধরেই নিয়েছিল আমার আর বিসিএস ক্যাডার হওয়া হবে না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজশাহীর সারদার মাঠে ট্রেনিং করতাম আর রাত ১০টা-০১টা পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম। এটা যে কী কষ্টকর ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। সারদার সবাই হাসাহাসি করে বলতো, এটাও সম্ভব! প্রিলি পাস করতে পারলেও রিটেন সম্ভব নয়। এ এক বিশাল জার্নি। ২০১৭ সালে প্রিলি, ২০১৮ সালে রিটেন, ২০১৯ সালে ভাইভা, ২০২০ সালে ফাইনাল রেজাল্ট, ২০২১ সালে ক্যাডার হিসাবে যোগদান। আল্লাহর রহমতে আমি ৬৯৫ জন সার্জেন্টের মধ্য থেকে একমাত্র ব্যক্তি হিসাবে ৩৮তম বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত হই।
জাগো নিউজ: কততম বিসিএসের কোন ক্যাডারে আছেন? মুনজুরুল ইসলাম: ৩৮তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে, প্রভাষক হিসাবে আছি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে।
Advertisement
জাগো নিউজ: কীভাবে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে হয়? ভাইভার ধরন সম্পর্কে যদি বলতেন- মুনজুরুল ইসলাম: বিসিএসের জন্য আসলে ধৈর্য ধরে পড়ে যেতে হবে। প্রিলি, রিটেনের জন্য বিসিএসের সিলেবাস অনুযায়ী বাজারের মানসম্মত যেকোনো সিরিজের বই (১টি করে) সংগ্রহ করে বারবার পড়া। একই পড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়লে পরীক্ষায় কনফিউশন বেশি তৈরি হয়, আবার মনে রাখাও কষ্ট হয়ে যায়। তবে বিজ্ঞান, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি, গণিতের জন্য ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ড বই দেখতেই হবে। আর ভাইভায় নিজ জেলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অনার্সের বিষয়, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলেই ভালো করা সম্ভব।
জাগো নিউজ: কার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন? মুনজুরুল ইসলাম: অবশ্যই আমার বাবা-মা। আমার মা আমার মেন্টর ছিলেন এবং আছেন। সারাজীবন থাকবেন। তবে বিশেষ করে, আমার বন্ধু মুক্তা মাহমুদ ও ছোট মামা মাহমুদুল হাসানের অবদান অনন্য।
জাগো নিউজ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? মুনজুরুল ইসলাম: একজন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকতা হিসাবে শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই। দেশে আলোকিত মানুষ তৈরি করতে চাই।
এসইউ/এমকেএইচ