ছোট-বড় গণপরিবহনের পাশাপাশি রাজধানীবাসীর চলাচলের আরেকটি বহুল প্রচলিত বাহন হলো রিকশা। নির্দিষ্ট গন্তব্যে বাসের তুলনায় রিকশার ভাড়া কয়েকগুণ বেশি হলেও স্বাচ্ছন্দ্য ও সহজলভ্যতার জন্যই রিকশায় চড়ে মানুষ।
Advertisement
রিকশা ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। তবে রিকশাচালকদের দাবি, তারা বেশি ভাড়া চান না। দূরত্ব বুঝে ভাড়া নেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় আগের চেয়ে আয় কম হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে এখনকার চেয়ে আয় ভালো হবে বলে তাদের আশা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংলগ্ন এলাকায় রিকশা চালান আব্দুর রহিম। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘সপ্তাহের সাত দিন সাত রকম আয় হয়। সকাল ১০টার দিকে বের হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চালাই। রিকশার জমা আর খাওয়া বাবদ দুইশ টাকা বাদ দিয়ে দিনে চার-পাঁচশ টাকা থাকে। পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকে। সপ্তাহে যা আয় করি বিকাশ করে পাঠিয়ে দিই।’
করোনার কারণে ভাড়া আগের চেয়ে কম দাবি করে এই রিকশাচালক বলেন, ‘আগে এ এলাকায় রিকশা চালাতাম, ছাত্র-ছাত্রীসহ অনেকেই আসত। এখন তো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, তাই এদিকে আর তেমন রিকশা চালানো হয় না। তবে ভাড়া পেলে ক্যাম্পাস এলাকায় চলে আসি।’
Advertisement
ভাড়া বেশি চান কি-না জানতে চাইলে রহিম বলেন, ‘আমরা কখনোই ভাড়া বেশি চাই না। আর দিন দিন জিনিসের যে দাম বাড়ছে, আবার বেশি দূরত্বের জায়গা হলে সেভাবে আমরা ভাড়া চাই। এক বেলা রিকশা চালালে দুই-আড়াইশ’ টাকা হয়।’
সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে নীলক্ষেত মোড় থেকে খালি রিকশা চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন বাবুল সরকার। রিকশায় উঠে আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আগের থেকে তো ভালো আছি। লকডাউনের মাঝে খুব কষ্ট ছিল। এখন তো রিকশার ভাড়া মিটিয়ে যা থাকে তা দিয়ে বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে মোটামুটি চলে যাচ্ছে।’
রাজধানীর শাহবাগ, শান্তিনগর ও কাকরাইল মোড়ে একাধিক যাত্রীর সঙ্গেও কথা হয় জাগো নিউজের।
তাদের মধ্যে পেশায় ব্যাংকার একজন বলেন, ‘লোকাল বাসে যাতায়াতের চেয়ে অল্প পথের দূরত্বে রিকশায় চলাচল ভালো লাগে। তবে রিকশাচালকরা খামখেয়ালি ভাড়া চাওয়ায় মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে। আবার কিছু চালক যাত্রীদের প্রত্যাশিত ভাড়াতেই রিকশা চালান।’
Advertisement
রামপুরা কাঁচাবাজার থেকে ঝিল কানন এলাকায় যাচ্ছিলেন আলম হোসেন। বাজার হাতে নিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বললেন, ‘এখান থেকে ২০ টাকাই ভাড়া। তবে মাঝে মাঝে রিকশাওয়ালারা ২৫-৩০ টাকাও চেয়ে বসেন। অনেকে না বুঝে আবার অনেকেই ইচ্ছে করে চান।’
রাজধানীর একাধিক রিকশাচালক ও মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দুই সিটি করপোরেশনের অনুমোদনে ঢাকার রাস্তায় চলে প্রায় ৮০ হাজার রিকশা। আর বিভিন্ন মালিক সমিতির নামে মহানগরীতে চলাচল করে পাঁচ লাখেরও বেশি ‘অবৈধ’ রিকশা।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. শফিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে রিকশার সংখ্যার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করলে পাওয়া যাবে।’
দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিকশা নিবন্ধনের জন্য নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। যার সময়সীমা আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত। বর্তমানে ডিএসসিসিতে ৫২ হাজার ৭১২টি এবং ডিএনসিসিতে প্রায় ৩০ হাজার নিবন্ধিত রিকশা রয়েছে।
নিবন্ধিত রিকশা প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, নিবন্ধন চলছে। এখনই সঠিকভাবে আমাদের সিটিতে বৈধ-অবৈধ রিকশার হিসেব বলা যাচ্ছে না।’
এওয়াইএইচ/এসএস/এইচএ/জেআইএম