বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা-সমরসিংহ বেড়িবাঁধের সামাজিক বনায়নের ৪ শতাধিক গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভূরঘাটা সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি সদস্য কামাল ফকির ও গৌরনদী বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার সেলিম আহম্মেদের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে গাছ বিক্রি করে ৩ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Advertisement
উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের জুন মাসে উপজেলার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ থেকে সমরসিংহ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটারসহ মোট ১৪ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের দু’পাশে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় তিনটি সমিতির উদ্যোগে বিভিন্ন প্রজাতির ১৪ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি উপজেলার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ থেকে সালথা পর্যন্ত বেড়িবাঁধের একপাশের (রিভার সাইডে) সামাজিক বনায়নের সহস্রাধিক গাছ দরপত্র আহ্বান ছাড়াই অবৈধভাবে কাটা হয়েছে। এখনও বেড়িবাঁধের আশপাশে রেইন্ট্রি, মেহগনি ও আকাশমনি গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে।
গৌরনদীর দুই বন কর্মকর্তার যোগসাজশে ভূরঘাটা সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি ও খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য কামাল ফকির শ্রমিক দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন। এর সঙ্গে সমিতির ২ থেকে ৩ জন প্রভাবশালী সদস্যও জড়িত রয়েছেন।
Advertisement
তবে সামাজিক বনায়ন সমিতির বেশিরভাগ সদস্যই বিষয়টি জানতেন না। তাদের না জানিয়েই গাছ কাটা হয়েছে। দু’এক জন সদস্য প্রতিবাদ করলে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ লক্ষাধিক টাকার গাছ বিক্রি করা হয়েছে। ওই টাকা গৌরনদীর দুই বন কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা কামাল ফকির আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সামাজিক বনায়নের ভূরঘাটা সমিতির সভাপতি কামাল ফকির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বেড়িবাঁধের আমানতগঞ্জ-শশিকর খাল পুনঃখননের কাজ চলছে। সমিতিকে না জানিয়ে ঠিকাদার খালের মাটি তাল গাছগুলোর গোড়ায় ফেলেন। মাটি চাপায় গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। আমি কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলো কেটে রেখেছি। আর গাছগুলোর ডালপালা লাকড়ি হিসেবে বিক্রি করেছি। ৬০০ মণ লাকড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে শ্রমিকদের মজুরি দেয়া হয়েছে।
গৌরনদী বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার সেলিম আহম্মেদ বলেন, ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় গৌরনদীর আমানতগঞ্জ থেকে কালকিনির শশিকর পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের কাজ চলছে। খাল খননের মাটি বেড়িবাঁধের ওপর রাখার জন্য বরিশাল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সম্প্রতি বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে অফিসিয়াল চিঠি দেন। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ থেকে সমরসিংহ পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ওপর খাল খননের মাটি ফেলা হয়।
এতে গাছগুলোর ক্ষতি হচ্ছিল। তাই সামাজিক বনায়ন সমিতির সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত কিছু গাছ কেটে তাদের হেফাজতে রেখেছেন। চলতি মাসেই গাছগুলো বিক্রির জন্য টেন্ডার দেয়া হবে। গাছ বিক্রি করে ৩ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। একটি মহল বিষয়টি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তারাই এটা রটাচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।
Advertisement
উপজেলা পরিবেশ ও বন বিষয়ক উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খাল পুনঃখনন কাজের স্বার্থে সরকারি বিধিমোতাবেক বেড়িবাঁধের সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের গাছ অপসারণ করা যেতে পারে। তবে দরপত্র আহ্বান ছাড়া গাছ কাটার কোনো সুযোগ নেই। অবৈধভাবে কেউ বেড়িবাঁধের গাছ কেটে থাকলে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাইফ আমীন/এফএ/জেআইএম