ঢাকাসহ দেশের সড়কগুলোতে শব্দদূষণ রোধে বন্ধ হচ্ছে না হাইড্রোলিক হর্ন। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সব উদ্যোগ কেবল মামলা ও জরিমানায়ই সীমাবদ্ধ। রাস্তায় চলাচলরত যানবাহন জব্দ করে জরিমানা করা হলেও অধিকাংশ গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে।
Advertisement
যদিও উচ্চস্বরের এই হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে মানুষকে সচেতন করতে প্রতিনিয়ত ক্যাম্পেইনসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবহন মালিক, চালক ও আমদানিকারকরা সচেতন হলে দ্রুত এটি বন্ধ করা সম্ভব বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আদালত থেকে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়। একইসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি ১৯৯৭ ও শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধি ২০০৬ অনুযায়ী ঢাকার গুলশান, বনানী, অফিসার্স ক্লাব, বারিধারা ও ধানমন্ডি এলাকাসহ সারাদেশে উচ্চশব্দ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নজরদারি টিম (সার্ভিলেন্স টিম) গঠনে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়।
এটি বাস্তবায়নে পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার (হাইওয়ে), ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার ও বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
Advertisement
তারপর ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সড়কগুলোতে অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে রাস্তায় চলাচলরত পরিবহনে ব্যবহৃত হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করে তা ধ্বংস করা হয়। পরিবহন মালিক ও চালকদের সচেতন করতে শুরু হয় নানা ধরনের ক্যাম্পেইন।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অপরাধে প্রতিদিন রাস্তায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা গাড়ি জব্দ ও জরিমানা আদায় করলেও পরিবহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার শেরেবাংলা নগর মোড়ে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো অপরাধ তা এখনো অনেকে জানে না। যার কারণে এটি বন্ধ হচ্ছে না। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের অপরাধে দু-একটি গাড়ি জব্দ বা জরিমানা করলেও তাতে তেমন প্রভাব পড়ছে না বা সচেতনও হচ্ছে না। অনেকে আবার মামলা ঠেকাতে ওপর মহলের তদবির করে, ফলে বাধ্য হয়ে তাদের ছেড়ে দিতে হয়।’
কঠোর আইন ও তার প্রচারণা না থাকায় হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
Advertisement
এদিকে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি শব্দদূষণ রোধে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধ ও টিম গঠন করে রাজধানীর কয়েকটি এলাকার সড়কে রাতে তদারকিতে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চান হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে ঢাকার ট্রাফিকের যুগ্ম-কমিশনার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ছয় বিবাদীকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
হাইড্রোলিক হর্নের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, হাইড্রোলিক হর্নের কারণে মানব দেহের নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এর মধ্যে শ্রবণব্যাধি, এমনকি বন্ধ্যাত্বও দেখা দিতে পারে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আইন প্রয়োগকারীরা মুখে ধর্মের কথা বললও বাস্তবে তার ধারে-কাছেও নেই। এদের মধ্য থেকে দেশপ্রেম ও মানুষের কল্যাণের চিন্তা হারিয়ে গেছে। এ কারণেই পরিবহনে হাইড্রোলিক হর্ন ও গাড়ির কালো ধোঁয়া বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই মনোবিজ্ঞানী আরও বলেন, সড়কে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হলো, নানা অজুহাতে তারা গাড়িচালকদের কাছে টাকা আদায় করছে। অর্থ উপার্জন তাদের কাছে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে প্রকৃত আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আগে দায়িত্বশীলদের মানুষ হতে হবে। অন্যের প্রতি প্রেম-ভালোবাসা ও মানুষের কল্যাণের চিন্তা করতে হবে। তবেই সড়কে কালো ধোঁয়া ও হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে আমাদের পদক্ষেপগুলো জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের কর্মসূচিগুলো জানিয়ে দেব।’
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে আদালতের নির্দেশনার পর আমরা নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এ বিষয়ে কাজ করতে ট্রাফিক পুলিশের একটি টিম গঠন করে পরিবহন মালিক ও চালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পেইন করে সবাইকে সচেতন করছে।’
আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘রাজধানীর সড়কগুলোতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের অপরাধে গাড়ি জব্দ ও জরিমানা করা হচ্ছে। অনেকে এ বিষয়ে সচেতন নয় বলে গুরুত্ব দেন না। পরিবহন মালিক, চালকসহ সবাই সচেতন হলে এটি বন্ধ করা সম্ভব হবে।’
এমএইচএম/ইএ/এসএইচএস/এইচএ/জেআইএম