চলছে ফাল্গুন মাস। আসছে কাঠফাটা রোদের মাস চৈত্র। এ সময় শুকিয়ে যায় মাঠ-ঘাট। নিচের দিকে নামতে থাকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ফলে সঙ্কটে পড়তে হয় সুপেয় পানির।
Advertisement
এরইমধ্যে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উঁচু টিলায় বসবাসকারীরা সুপেয় পানির সঙ্কটে পড়েছেন।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি সঙ্কটের সূত্রপাত হয় আজ থেকে প্রায় বছর দশেক আগে থেকে। প্রাকৃতিকভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিম্নগামী হওয়াতে এ সঙ্কট ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে উল্লেখিত এলাকায় সাধারণ টিউবওয়েলের পানির প্রবাহ হ্রাস পেতে থাকে। ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে অগভীর নলকূপগুলোর পানির প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দারা সু-পেয় পানির অভাব অনুভব করতে থাকেন। এলাকাব্যাপী দেখা দেয় পানযোগ্য পানির সঙ্কট।
এদিকে, এ সময়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নগামী হওয়ার অন্যতম কারণ বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ধান চাষসহ অন্যান্য ফসলি জমিতে পানি সরবরাহ করা। শীত মৌসুমে রবি শস্যসহ বিভিন্ন ফসল চাষে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়। তাই নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরসহ সব জলাধার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
Advertisement
অন্যদিকে, বিশুদ্ধ পানির অভাব দূরীকরণে এলাকার সচ্ছল ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাড়ির আঙ্গিনায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ডিপ-টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। ওই ডিপ-টিউবওয়েলগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়াতে অনেকেই সেখানে যেতে অস্বস্তিবোধ করেন। এরপরও অনেকটা বাধ্য হয়েই যেতে হয় সুপেয় পানির প্রয়োজন মেটাতে।
পৌরসভার মহলুলসুনামের বাসিন্দা তাফহিম চৌধুরী জানান, উনার বাড়ির অগভীর নলকূপটির পানি প্রবাহ এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
পানি সঙ্কটে ভুক্তভোগী দাউদনগর গ্রামের জুনায়েদ চৌধুরী জানান, উনার বাড়িতে ২৮০ ফুট গভীরতা সম্পন্ন টিউবওয়েলটির পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি মোটর সংযোগের মাধ্যমে আপাতত পানির অভাব পূরণ করতে পেরেছেন।
তিনি আরও জানান, মার্চ এপ্রিলের মধ্যে যদি বৃষ্টিপাত না হয় তা হলে তার সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
Advertisement
বিরামচর গ্রামের আহমেদ কবির জানান, উনার অগভীর নলকূপটির পনি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পাশের বাড়ির গভীর নলকূপ থেকে পাইপ লাগিয়ে পানি আনছেন।
বাগুনিপাড়া গ্রামের আলেয়া বেগম জানান, তাদের বাড়ির টিউবওয়েল এখন আর পানি দেয় না, তাই অন্য বাড়ি থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়।
উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের রোকেয়া বেগম বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় আমাদের টিউবওয়েলে বেশ কিছুদিন ধরে পানি দিচ্ছে না। ফলে অন্য বাড়ি থেকে কষ্ট করে খাবার পানি আনতে হয়।
এ দিকে ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর নিম্নগামী হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে পুকুরের পানিও। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই পরিবেশে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এ এলাকায় রাষ্ট্রের উদ্যোগে পর্যাপ্ত সংখ্যক গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার এই পানি সংকট দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন অত্র এলাকার সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘বিশুদ্ধ পানির সমস্যা এই মৌসুমে হয়েই থাকে। আমি সরেজমিনে বিষয়টি দেখেছি। সেচ কাজে ও বিভিন্ন সময় পাম্প দিয়ে অতিরিক্ত পানি তোলায় লেভেল নিচে চলে যায়। সে জন্যই এমনটি হয়ে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পানির সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। পল্লী পানির ব্যবস্থা করছি। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় নলকূপ করে দিচ্ছি। লেভেল ৪০ ফুট নিচে চলে গেলেও নলকূপের মাধ্যমে পানি আসে৷ আমাদের হাতে আরও কয়েকটি প্রজেক্ট রয়েছে, সেগুলো করতে পারলে আশা করছি পানির সমস্যা দূরীকরণ সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ সময় সব এলাকাতেই পানির স্তর নিচে নেমে যায়। যার ফলে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দেয়। উপজেলা থেকে এরইমধ্যে ৭৮টি গভীর নলকূপের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও মানুষের কষ্ট লাগব হবে।
কামরুজ্জামান আল রিয়াদ/এসজে/এএসএম