চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের ৮নং হাটিলা গ্রামে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া নামে এক কৃষক। আর এই বাগানটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী।
Advertisement
শুধু স্থানীয় নয় বাগানটিকে এক নজর দেখার জন্য বা একটি সেলফি তোলার জন্য প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন উৎসুক জনতা। এমনকি ভিন্নজেলা থেকেও অনেকেই ঘুরতে আসছেন এখানে। ইতোমধ্যে চাঁদপুরের ভ্রমণ-পিপাসু মানুষের পছন্দের স্থানে পরিণত হয়েছে এই বাগানটি।
কৃষি অধিদফতর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের দেয়া তথ্যমতে, এ বছর কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনার আওতায় জেলার মোট ১০০ জন কৃষককে ১ কেজি করে সূর্যমুখীর বীজ দেয়া হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৪০০ টাকা। এছাড়াও সকল কৃষককে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা এবং সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশে একটু সময় কাটানোর জন্য আর হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুলের হাসির ঝিলিক দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক জনতা এসে ভিড় করছেন।
Advertisement
সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা এতই বেশি যে তাদের অবাধ বিচরণে হুমকিতে পড়েছে বাগানটি। এতে বিপাকে পড়েছেন মালিক পক্ষ। অনেকেই ছবি তোলার জন্য ঢুকে পড়ছেন বাগানের ভেতর। ফুলের চেয়ে বেশি দর্শনার্থীর সংখ্যা। দর্শনার্থীদের অবাধ চলাফেরায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছ ও ফুল। কেউ কেউ জোর করে ছিঁড়ে নিচ্ছেন ফুল, আবার কেউ নিতে চান আস্ত গাছ।
ফসলের মাঠের মাঝখানে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। ফুটে আছে হাজার হাজার হলুদ বর্ণের সূর্যমুখী ফুল। যে দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের মন জয় না করার কোনো উপায় নেই। সম্প্রতি এই দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই বাগানটি এক নজর দেখতে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
সূর্যমুখী ফুল বাগানের দেখতে আসা দর্শনার্থী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আসলে একসঙ্গে এতগুলো সূর্যমুখী ফুল আগে কখনো দেখা হয়নি। তাছাড়া চাঁদপুরে সূর্যমুখীর বাগান আগে কখনও আমি দেখিনি তাই এখানে ছুটে আসা।
মোরশেদ আলম নামের আরেকজন দর্শনার্থী জানান, আমি ঢাকায় থাকি। কিছুদিন ধরে আমার বন্ধুবান্ধব এখানে এসে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে। সেটা আমি দেখতে পাই। আর সেখান থেকেই বাগানটি নিজের চোখে দেখার আগ্রহ জন্মে। তাই বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে এখানে চলে আসি।
Advertisement
রবিউল গাজী নামের একজন দর্শনার্থী জানান, এই সূর্যমুখী ফুল বাগানটি মানুষের নজরে আসছে। তাই আমরাও সৌন্দর্য উপভোগ করতে সবাই মিলে দেখতে এসেছি। খুব ভালো লাগলো। পরিবেশটা খুব সুন্দর।
বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাকিব হোসেন জানান, দর্শনার্থীদের সংখ্যা এতটাই বেশি যে এখন বাগানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি সারাদিন এখানেই পড়ে থাকি। কারণ দর্শনার্থীরা অনেক সময় ভেতরে ঢুকে গাছ এবং ফুল দুটোই নষ্ট করে। প্রতিদিন প্রায় ৪, ৫ হাজার মানুষ এখানে আসে। এত মানুষ সামাল দেয়া আমার জন্য অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
জেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র দাস জানান, প্রক্রিয়াজাতকরণে জটিলতা থাকায় চাঁদপুরে সূর্যমুখীর চাষ করতে আগ্রহী না কৃষকরা। তাই সূর্যমুখী আবাদ চাঁদপুরে না হওয়ায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা একটু বেশি। কৃষকের ক্ষতি না করে এবং বাগান নষ্ট না করে সেলফি তোলা এবং আনন্দঘন সময় কাটানোর জন্য দর্শনার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে বাগানের সৌন্দর্য অনেকটাই বিনষ্ট হচ্ছে। আগত দর্শনার্থীরা যদি আরেকটু সচেতন হন তাহলে সূর্যমুখী বাগান তার সৌন্দর্য ফিরে পাবে।
নজরুল ইসলাম আতিক/এমআরএম/এমকেএইচ