ফারাও রানি হিসেবে একসময় মিশর শাসন করেছিলেন ক্লিওপেট্রা। তার ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্যে আজও অভিভূত বিশ্ববাসী। নিজের জ্ঞান ও মেধা দিয়ে তিনি নিজ দেশকে শত্রুপক্ষের আক্রমণ থেকে বহুবার রক্ষা করেছেন।
Advertisement
রানি ক্লিওপেট্রা বাস করতেন আলেকজান্দ্রিয়া শহরে। আলেকজান্দ্রিয়া শহরটি খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সালে গ্রেট আলেকজান্ডার প্রতিষ্ঠা করেন। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পরে, দীর্ঘ ৩০০ বছর ধরে আলেকজান্দ্রিয়া দখল করে রাখে গ্রীকরা।
রানি ক্লিওপেট্রাও একজন গ্রীক হয়েও শক্তিশালী মিশরীয় রানি হয়ে ওঠেন। তার শাসনকালে মিশরে নানা উন্নয়ন ঘটেছিল। তিনি বহুবার রোমান নেতাদের কাছ থেকে নিজের দেশকে বাঁচিয়েছেন।
এজন্য ব্যক্তিগতভাবেও তিনি অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষা সহ্য করেছেন। শেষকালে দুঃখজনকভাবে তিনি আত্মহত্যা করেন। যদিও তার মৃত্যু নিয়ে নানা কল্প-কাহিনি ছড়িয়ে রয়েছে।
Advertisement
তবে কখনো কেউ জানতেও পারেননি, রানি ক্লিওপেট্রা কীভাবে পানির নিচে এক আধুনিক রাজপ্রাসাদ তৈরি করেছিলেন! ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত ক্লিওপেট্রার প্রাসাদ সম্পর্কে কারও জানা ছিল না।
১৪০০ বছর আগে মিশরে একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং একটি ধ্বংসাত্মক সুনামি হয়েছিল। যা আলেকজান্দ্রিয়া শহরের উপকূলে আঘাত হেনেছিল। এরপর ডুবে যায় এন্টিহোডোস দ্বীপ। তারপরই সন্ধান মেলে রানি ক্লিওপেট্রার প্রাসাদের।
ভূমিকম্প ও সুনামির তোড়ে এন্টিহোডোস দ্বীপ ডুবে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর কয়েক শতাব্দী পরে। এ ঘটনার পরে ছোট এক উপসাগরে প্রায় ১০ মিটার পানির নীচে প্রাসাদটির সন্ধান পাওয়া যায় প্রথমে। এরপর কেটে যায় বহু বছর।
সর্বপ্রথম ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ ফ্রাঙ্ক গডডিও নামের এক দার্শনিক ও গবেষক গ্রীক ঐতিহাসিক প্রাচীন রচনা স্ট্র্যাবোতে রানির রহস্যময় এ প্রাসাদ সম্পর্কে জানতে পারেন। এ ছাড়াও এন্টিহোডস দ্বীপ সম্পর্কেও তথ্য ছিল স্ট্র্যাবো নথিতে।
Advertisement
ফ্রাঙ্ক গডডিও, যিনি ইউরোপীয় ইনস্টিটিউট অব আন্ডারওয়াটার প্রত্নতত্ত্বেরও সভাপতি। তিনি ক্লিওপেট্রার ডুবে যাওয়া রাজবাড়ির গোপন রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য একটি অভিযানের পরিকল্পনা করেন।
টানা ১০ বছর কঠোর অনুসন্ধানের পর তিনি রানির রহস্যময় রাজপ্রাসাদ খুঁজে বের করে চমকে দেন বিশ্বকে। প্রাচীন নথি স্ট্র্যাবোর তথ্য অনুযায়ীই এ অভিযান পরিচালনা করেন। অ্যান্টিহোডোস দ্বীপের নিচে অন্বেষণ করার সময় গড্ডিওর দল বিভিন্ন সূত্র পেতে শুরু করে।
৩০ মিটার গভীর থেকে একটি প্রাচীন কার্গো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ, গয়না, চুলের ক্লিপ, আংটি এবং কাচের কাপ পাওয়া যায়। ১৯৯০ সালের দিকে ডুবুরিরা অ্যান্টিহোডোস দ্বীপের পূর্বদিকে লাল মিশরীয় গ্রানাইট দিয়ে তৈরি বিশালাকার স্তম্ভগুলো আবিষ্কার করেছিল।
সেখানে তারা ৬০টিরও বেশি খণ্ড খুঁজে পান। যেগুলো প্রায় ৪ ফুট ব্যাস এবং ৭ মিটার দৈর্ঘ্য ছিল। গডডিওর দল অবশেষে ক্লিওপেট্রার প্রাসাদের কাঠের ভিত্তি খুঁজে পায়।
কার্বন পরীক্ষার পর জানা যায়, ক্লিপেট্রার জন্মেরও প্রায় ২০০ বছর আগে এ প্রাসাদটি তৈরি করা হয়েছিল। এ কারণেই ধারণা করা হয়, ক্লিওপেট্রা এ প্রাসাদটি নিজে তৈরি করেননি বরং উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন।
বর্তমানে পানির তলে ভগ্নপ্রায় এ রাজপ্রাসটি জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। কেউ চাইলেই ডাইভিং করে এ জাদুঘর ঘুরে দেখার সুযোগ পান। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ডুব দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা দক্ষতা থাকতে হয়। কারণ সেখানকার ঢেউগুলো বেশ বড় ও শক্তিশালী।
এ সাইটটি বেশি গভীর নয়। মাত্র ৫ থেকে ৮ মিটার। পানিতে ডুব দিলেই প্রাসাদের অনেকগুলো কলাম দেখা যাবে। সেইসঙ্গে দেখা যাবে বিশাল সব পাথর, প্রাচীনকালে ব্যবহৃত বড় বাটি এবং দুটি স্ফিংক্স মূর্তি।
দ্য গার্ডিয়ান/সিবিএস নিউজ/জেএমএস/জিকেএস