ফিচার

৩০ তরুণের স্মার্ট মানিকছড়ি পাবলিক লাইব্রেরি

একটি পরিপাটি কক্ষে কাঠের তাকে থরে থরে সাজানো আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’, বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ’ ও ‘গীতাঞ্জলি’সহ তথ্যসমৃদ্ধ বিভিন্ন বই। সেখানে জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী পাঠকের সমাবেশ। এ যেন একখণ্ড জ্ঞান অর্জনের তীর্থভূমি।

Advertisement

বলছিলাম পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে ৩০ তরুণের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করা ‘স্মার্ট মানিকছড়ি পাবলিক লাইব্রেরি’র কথা।

দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক লাইব্রেরি না থাকায় বিভিন্ন বইপড়া থেকে পিছিয়ে পড়ছিল বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ঘেঁষা মানিকছড়ির মানুষ। জ্ঞানের ভান্ডার বইয়ের সাথে যখন মানিকছড়ির মানুষের দূরত্ব বাড়ছে; তখনই মানিকছড়ির বইপ্রেমী মানুষকে বইমুখী করে তুলতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্মার্ট মানিকছড়ির ত্রিশ তরুণ গড়ে তোলেন পাঠাগারটি।

জানা যায়, মানিকছড়ির অসহায় মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৭ সালে স্থানীয় কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ প্রতিষ্ঠা করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্মার্ট মানিকছড়ি’। করোনা প্রাদুর্ভাবে মানিকছড়ির তিনশ অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা ও ৪০টি পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে আলোচনায় আসে সংগঠনটি।

Advertisement

সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের পথ ধরে ত্রিশ তরুণ যখন জ্ঞানের দরজা খুলে দিতে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন; তখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় মানিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। স্বপ্ন বাস্তবায়নে মানিকছড়ি টাউন হলের একটি কক্ষ বরাদ্ধ দেওয়া হয় পাঠাগারের জন্য।

করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গতবছরের ৮ জুলাই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে স্মার্ট মানিকছড়ির প্রতিষ্ঠাতা মো. শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে স্বপ্নবাজ ত্রিশ তরুণ। স্বপ্নের পথ ধরে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ।

ত্রিশ স্বপ্নবাজ তরুণের হাত ধরে জ্ঞানপিপাসু মানুষের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে ‘স্মার্ট মানিকছড়ি পাবলিক লাইব্রেরী’। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে পাবলিক লাইব্রেরি। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ জন পাঠক আসেন এখানে। যে যার পছন্দের বই পড়ে নিজের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করছেন।

পাঠাগারের উদ্যোক্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের অনুদানে পাঠাগারটি গড়ে তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধ করতে বই দিয়েছেন। বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় দেশি-বিদেশি পাঁচ শতাধিক বইয়ের সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে পাঠাগারটি।

Advertisement

ইতোমধ্যে স্মার্ট মানিকছড়ি পাবলিক লাইব্রেরি পরিদর্শন করে তাদের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ জনপদে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে মানুষকে আলোকিত করবে লাইব্রেরিটি।’

নির্দিষ্ট সময়ে যেকোনো পাঠক এখানে এসে বই পড়তে পারবেন। এর জন্য কোনো ফি দিতে হবে না। তবে কেউ বাড়িতে বই নিতে হলে রেজিস্ট্রেশন করে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে নিতে পারবেন। তবে অবশ্যই ৭ দিনের মধ্যে সে বই ফেরত দিতে হবে।

স্থানীয় সাংবাদিক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বই মানুষকে আলোকিত করে। বই জ্ঞানের প্রতীক। হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের পথপ্রদর্শক। একটি সেতু যেমন নদীর দু’পারের মানুষের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে; তেমনই বই মানুষকে ইতিহাস-ঐতিহ্য জানাতে সেতুর মতোই ভূমিকা রাখে।’

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাইলফলক হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে ‘স্মার্ট মানিকছড়ি পাবলিক লাইব্রেরি’। এমনটিই মনে করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও মানিকছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মাইন উদ্দিন।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এসইউ/এমএস