বিশেষ প্রতিবেদন

বেরসিক সার্জেন্ট : ১০০% সাংবাদিকের গাড়ি আটক!

শনিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টা। এলিফ্যান্ট রোডে বাটা সিগন্যালের সামনে চার রাস্তার সংযোগস্থলের ব্যস্ততম সড়কে ছুটে চলছে অসংখ্য রিকশা, বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন। দুই যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশকে কেন্দ্র করে নগরীতে গত ২-৩ দিন ধরে তল্লাশি ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ওই সময়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে (নারায়ণগঞ্জ-থ, ১১-২১৪৪) তল্লাশির লক্ষ্যে হাত  উঁচিয়ে দাঁড় করালেন কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট। অটোরিকশার চালক জানালেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দুইশ টাকা ভাড়ায় ধানমন্ডিতে রোগী নামিয়ে দিতে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে সার্জেন্টের দৃষ্টিতে পড়ে অটোরিকশার সামনের গ্লাসে নীল লাল কালির হরফে বড় বড় করে লেখা ‘১০০% সাংবাদিক, ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, আইন শৃংখলা বাহিনীকে সহায়তা করুন-এম’। চিন্তার বলিরেখা ফুটে উঠল সার্জেন্টের চোখেমুখে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন পূর্বপরিচিত সাংবাদিককে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলেন, ভাই আপনি কত পার্সেন্ট সাংবাদিক। প্রশ্ন শুনে সাংবাদিকরাও বিব্রত। তারা পাল্টা সার্জেন্টকে প্রশ্ন করলেন সাংবাদিকের আবার কিসের পারসেন্টেজ? এবার সার্জেন্ট নিশ্চিত হলেন আসলেই সাংবাদিকদের কোন পারসেন্টেজ দিয়ে মাপা যায় না। শুনতে নাটকীয় হলেও আজ বাস্তবেই ১০০% সাংবাদিকের সিএনজি অটোরিকশা আটকে দেয়া হয়। এ সময় রাস্তায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অদ্ভুত স্টিকারযুক্ত গাড়িটি দেখে নানা নেতিবাচক কথাবার্তা বলতে থাকেন।আটকের কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে প্রাইম নিউজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হম্বিতম্বি শুরু করেন যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা মমিন। তিনি পাল্টা হুমকির সুরে সার্জেন্টকে শাসিয়ে বলেন, আপনি কেন সাংবাদিকের গাড়ি  আটকালেন। এখনি ছেড়ে না দিলে অসুবিধা হবে। বেরসিক সার্জেন্ট তাকে সাফ জানিয়ে দেন, ১০০ ভাগ  সাংবাদিককে এক নজর চোখের দেখা না দেখে তিনি গাড়ি ছাড়বেন না। এর পর ওই সাংবাদিক ট্রাফিকের এক এডিসিকে দিয়ে তদবির করিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সিএনজি অটোরিকশার চালক জসিম মিয়া জানান, তার মালিকের নাম মমিন, তিনি প্রাইম নিউজে চাকরি করেন। তিনি ওই গাড়ি নিয়ে চলাচল করেন। ফাঁকে ফাঁকে জসিম নিজেই ট্রিপ মারে। আজও ঢামেক হাসপাতাল থেকে দু’জন রোগীকে নামিয়ে দিতে ধানমন্ডিতে যাচ্ছিলেন তিনি।এ প্রতিবেদকের সঙ্গে  আলাপকালে ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, আইনগতভাবে গাড়িটিকে তিনি ডাম্পিং স্টেশনে পাঠাবেন। এর আগে মালিক রেকারের টাকা পরিশোধ করে গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে পারবেন। তিনি এখন গাড়িটি ছেড়ে দিলে ওই সাংবাদিকই মানুষকে বলবে টাকা খেয়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।যে পুলিশ সার্জেন্ট গাড়িটি আটক করেন তার নাম অপূর্ব। ইতিপূর্বে এক সচিবের গাড়ি উল্টোদিক থেকে আসলে সেই গাড়ি আটকে দিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দেন। অবশ্য সেদিন সচিব গাড়িতে ছিলেন না। তার নিরাপত্তারক্ষী পুলিশ কনস্টেবল নিয়ম ভঙ্গ করে উল্টো পথে আসছিলেন। অভিযোগের ব্যাপারে ওই কথিত সাংবাদিক মমিনের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে নম্বরটি এখন ব্যস্ত আছে শুনতে পাওয়া যায়। এমইউ/এআরএস/এমএস

Advertisement