ফিচার

অন্যের স্ত্রীকে চুরি করে বিয়ে করাই যেসব দেশের রীতি

বিয়ে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অদ্ভুত সব রীতি-নীতি। যা অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিয়ে নিয়ে সবারই কমবেশি স্বপ্ন থাকে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান রয়েছে; যেখানে বিয়ে মানেই নানা রকম পরীক্ষা দেওয়া।

Advertisement

ঠিক তেমনই অন্যের বউকে চুরি করে পালানো, এরপর তাকে বিয়ে করার বিষয়টি বড়ই অদ্ভুত। এমন আজব এক রীতিকে আবার উৎসব হিসেবে পালন করছে অনেক দেশ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন রীতির প্রচলন রয়েছে। যা জানলে আপনি অবাক হবেন বৈ-কি, ঘৃণাও জন্মাবে তাদের ওপর। কারণ নারীকে শুধু অপহরণই নয়, বরং ধর্ষণ করার মাধ্যমেও বিয়েতে রাজি করানো হয়।

ব্রাইড কিডন্যাপিং বা বধূ অপহরণ বিশ্বজুড়ে প্রাগৈতিহাসিক সময়কাল থেকেই চালু ছিল। বিশেষ করে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, মেক্সিকো, ইউরোপ এবং আমাজন জঙ্গলের উপজাতিদের মধ্যে এ ধরনের রীতি অতীতকাল থেকেই প্রচলিত। বর্তমানে ককেশাস এবং মধ্য এশিয়ায় এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

Advertisement

কনে অপহরণের মাধ্যমে বিবাহের বৈধতা দেওয়া হয় বিভিন্ন অঞ্চলে। যা যৌন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এ জাতীয় রীতি-নীতি আইনবিরোধী হলেও তা পালন করা হচ্ছে সামাজিক রীতি হিসেবে। জেনে নিন কোন দেশগুলো এমন অদ্ভূত উৎসব পালন করে-

আফ্রিকা: আফ্রিকার ৩টি দেশে এমন উৎসব পালিত হয়। প্রায়ই কনে অপহরণের নামে সেখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের যাযাবর উপজাতি ওডাবে এ রীতি মেনে আসছে যুগ যুগ ধরে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে সেখানকার পুরুষরা অন্যের বউকে চুরি করে পালায়। উৎসবটি হয় মরুভূমিতে।

টানা ৭ দিন ধরে অন্যের বউকে চুরি করে পুরুষরা। যে পুরুষ অন্যের বউকে চুরি করবেন; তাদের স্ত্রীরাও উৎসবে যোগ দেন। পাশাপাশি চলে খাওয়া-দাওয়া ও নাচ-গান। এ উৎসবে নিজেদের পছন্দমতো পুরুষ সঙ্গী বাছাই করেও নিতে পারেন নারীরা। এমন উৎসবে পুরুষদের অংশগ্রহণ করার মূল উদ্দেশ্য হলো নিজেদের শারীরিকভাবে যোগ্য প্রমাণ করা।

রুয়ান্ডা: রুয়ান্ডার বিভিন্ন অঞ্চলেও নববধূ-অপহরণের ঘটনা প্রচলিত। এক্ষেত্রে অপহরণকারীরা তাদের পছন্দসই নারীকে নিজ বাড়ি থেকে বা রাস্তা থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়। জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং পরে ওই নারীকে বিয়ে করে। অনেক সময় কনের পরিবার ধনী হলে এমন বিয়ে হতে দেয় না। আবার কনে গরীব হলে ধর্ষকের সঙ্গেই বিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

রুয়ান্ডার এ রীতি অনুসারে, অপহরণ হওয়া নারী যদি ধর্ষণের পর গর্ভধারণ করেন, সেক্ষেত্রে ওই নারীর কদর আরও বেড়ে যায়। তখন ঘটা করে বরের পরিবার বিবাহের অনুষ্ঠান করে থাকেন। এরপর অপহরণকারী ও তার পরিবার কনের মা-বাবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এমন সময় বরের পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে কনের পরিবারকে একটি গাভি, নগদ অর্থ ও দামি উপহার দিয়ে থাকে।

রুয়ান্ডায় কনে-অপহরণ বিবাহের কারণে অনেক নারীই পরবর্তীতে বিপদে পড়েন। সেখানকার মানবাধিকার কর্মীদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব পুরুষ এমন বিয়ে করেন; তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই স্ত্রীদের ছেড়ে দেন। এমনকি অপহরণের পর ধর্ষিত নারীদের গর্ভ থেকে বেশিরভাগই প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম হয়। যা সত্যিই দুঃখজনক!

মিশর: মিশরে খ্রিস্টান বিবাহিত বা অবিবাহিত সব নারীকেই ইসলামে দীক্ষিত করতে পুরুষরা কনে অপহরণ করেন। তারপর মুসলিম পুরুষরা তাদের বিয়ে করেন। এক্ষেত্রে নারীদের ধর্ষণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ সাঈদ হুসেন খলিল এল-সিসি’র সালাফিস্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এমন রীতির প্রচলন ঘটে।

ইথিওপিয়া: ইথিওপিয়ার অনেক অঞ্চলে নববধূ অপহরণের ঘটনা প্রচলিত। ২০০৩ সালে ইথিওপিয়ার সমীক্ষা অনুসারে, সেখানে প্রায় ৬৯ শতাংশ ঘটনা ঘটে। ইথিওপিয়ায় কোনো পুরুষ যদি অন্যের বউকে অপহণ করতে চান, তাহলে তিনি বন্ধুদের সমন্বয়ে কাজটি করেন। এক্ষেত্রে তারা ঘোড়া ব্যবহার করে থাকেন।

সেখানকার এ রীতি পালন করা হয় সবার সামনেই। কোনো পুরুষ যদি এমন কোনো নারীকে অপহরণ করে, তবে তিনি তার নিজ বাড়িতেই নিয়ে যেতে পারবেন। যতদিন না ওই নারী গর্ভবতী হচ্ছেন; ততদিন পুরুষটি তার পরিবারের সামনেই নারীকে ধর্ষণ করেন। এরপর বিয়ে দেওয়া হয় তাদের। যদি ওই নারী গর্ভবতী না হন; তাহলে ধর্ষণকারী পুরুষ ওই নারীকে স্ত্রীর মর্যাদা দেন না।

২০১০ এবং ২০১৩ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে ইউনিসেফ জানায়, ইথিওপিয়ার অন্তত ১০ থেকে ১৩ শতাংশ বিবাহ এমন অপহরণের মাধ্যমে ঘটে। শুধু যে বিবাহিত নারীকেই অপহরণ করা হয়, তা কিন্তু নয়। অনেক নাবালিকাকেও অপহরণ করে দীর্ঘদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়।

জোরপূর্বক যৌনাচার এবং গর্ভাবস্থায় অনেক কিশোরী গুরুতর শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকে। আবার অনেকে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারাও যায়। সেখানে অপহরণের শিকার নারীদের বেশিরভাগই পরবর্তীতে এইডসে আক্রান্ত হয়ে জীবন কাটায়।

মধ্যএশিয়া: মধ্যএশিয়ায় কিরগিস্তান, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কারাকালাপাকস্তানে কনে অপহরণের ঘটনা নিত্য ঘটে থাকে। তবে কিরগিস্তানে ২০১৩ সালে এ রীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কনে অপহরণে দোষীর সাজা হিসেবে ১০ বছরের কারাদণ্ড।

কিরগিস্তানে কনে অপহরণ ‘আলা কচু’ নামে পরিচিত। স্ত্রী গ্রহণের একটি স্বীকৃত এবং সাধারণ উপায় এটি। ২০১৫ সালে কিরগিস্তানের এক সমীক্ষায় উঠে আসে, সেখানকার প্রায় ১৪ শতাংশ নারীই অপহরণের শিকার হয়ে বিবাহে আবদ্ধ হন। বেসরকারি সংস্থাগুলোর গবেষণা অনুসারে, সেখানে বউ চুরির ঘটনা ৭৫-৮০ শতাংশ।

যদিও বর্তমানে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমে গেছে। তবুও একেবারেই যে ঘটে না, তা কিন্তু নয়। আবার অবৈধ এ কর্মকাণ্ডে অপহরণকারীদের বিরুদ্ধেও খুব কম বিচার হয়।

শুধু এ কয়েকটি দেশ নয় বরং কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, দাগেস্তান, চেচনিয়া এবং ইঙ্গুশেটিয়াসহ আজারবাইজানেও এমন ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও জর্জিয়া, পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, হামং সংস্কৃতিতেও ব্রাইড কিডন্যাপিংয়ের প্রচলন রয়েছে।

এমনকি চীন, জাপান, আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপের রোমা (রোমানি) সম্প্রদায়, ভূমধ্যসাগরীয়, ইতালি, আয়ারল্যান্ড, মাল্টা, স্লাভিক উপজাতিদের মধ্যেও বউ চুরির মতো নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটে আসছে।

বিবিসি/ইউনিসেফ/জেএমএস/এসইউ/এমএস