দেশজুড়ে

কালীগঞ্জে তোয়ালে শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে

গাজীপুরের কালীগঞ্জে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তোয়ালে শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে। গত শনিবার থেকে তোয়ালে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে। এর মধ্যে কিছু মালিক তাদের দাবি মেনে নিলে শ্রমিকদের একাংশ দুই দিন পর কাজে যোগ দেয়। আর কিছু মালিক দাবি মেনে না নেয়ায় ৮ দিন যাবৎ চলছে বৃহৎ অংশের কর্মবিরতি। আর এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে তোয়ালে মালিকরা।জানা যায়, কালীগঞ্জ পৌর এলাকাসহ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ৭০ জন মালিকের সাড়ে ৪ শতাধিক পাওয়ারলোম বা তোয়ালে তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছে। তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের তোয়ালে ও রুমাল দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছে। উৎপাদিত তোয়ালে রাজধানী ঢাকার সদরঘাট, চকবাজার, সিলেট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, শেখেরচর, ভৈরব, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি বিক্রয় ও সরববাহ করা হয়। প্রতিটি তোয়ালের জন্য শ্রমিকদের মজুরি হিসেবে ৩০ সাইজের জ্যাকেটের মজুরি ১৩ টাকা, ২৭ সাইজের জন্য ১২ টাকা, ২২-৩৪ সাইজের জন্য সাড়ে ৮ টাকা, ২২ বাংলার জন্য সাড়ে ৬ টাকা, ২৫ সাইজের জন্য সাড়ে ৭ টাকা ও ১৫ সাইজের ৫ টাকা হারে দিয়ে আসছে মালিক পক্ষ। শ্রমিকরা গত ১৪ নভেম্বর উৎপাদিত প্রতিটি তোয়ালের মজুরি ৫ টাকা হারে বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন।বড়নগর গ্রামের আফসার উদ্দিন মালিকানাধীন আফসার টেক্সটাইলে কর্মরত একই গ্রামের রুহুল আমিন (৪০) বলেন, প্রতি ১৫ দিন অন্তর কাজের মজুরি বাবদ পনের’শ থেকে ষোল’শ টাকা পাওয়া যায়। দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করে যে মজুরি পায় তা দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। তিনি আরও বলেন, আমাদের জন্য যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে তা অনেক আগের। এ দিয়ে সারা মাস কাজ করে আমাদের পরিবারের খরচ মেটানো কষ্টকর হয়। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী আমরা খুব বেশি দাবি করিনি। একই গ্রামের সাফির উদ্দিন মালিকানাধীন আলমগীর ড্রাইংয়ে কর্মরত ভাদগাতি গ্রামের মো. জনি মিয়া জানান, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই তোয়ালে শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। তবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে যে মজুরি পায় তা দিয়ে তাদের সংসার চলে না।  কালীগঞ্জ উপজেলা পাওয়ারলোম মালিক বহুমূখী সমবায় সমিতির সদস্য ও তোয়ালে ব্যবসায়ী মো সাফির উদ্দিন জানান, শ্রমিকরা  তোয়ালে প্রতি ২ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবি করে। আমরা তাদের ১ টাকা বৃদ্ধি করে কাজে যোগ দিতে বলেছি এবং আগামী ৬ মাস পর বাজারে তোয়ালের দাম বাড়িয়ে তাদের আরও ১ টাকা বৃদ্ধির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছি। কিন্তু তারা কাজে যোগ দেয়নি। পাওয়ারলোম মালিক বহুমূখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও তোয়ালে ব্যবসায়ী মো. রুহুল আমিন জানান, এক সময়ের লাভজনক এই শিল্পটি নানা প্রতিকূলতায় আজ ধ্বংসের পথে। কিন্তু বংশ পরম্পরায় চলে আসা এই তোয়ালে শিল্প চাইলেই বাদ দিতে পারছি না। কারণ এই তোয়ালে শিল্প আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। তাছাড়া চাইলেই আমরা এখন অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে পারছি না। এর মধ্যে তোয়ালে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।      সমিতির সভাপতি ও তোয়ালে ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা মিয়া জানান, সুতা, রং, শ্রমিকের মজুরি, বুনন ও পরিবহনসহ প্রতিটি কাজে তোয়ালের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ কারণে এ পেশা সম্প্রসারণ নয় বরং সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। কিন্তু আমাদের কিছু না জানিয়ে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে। শ্রমিকরা আমাদের জিম্মি করে রেখেছে। তিনি আরও জানান, তাদের নতুন করে মজুরি বৃদ্ধির দাবি এ শিল্পের ধংসের ইঙ্গিত।  আব্দুর রহমান আরমান/এসএস/এমএস

Advertisement