দেশজুড়ে

ঐতিহ্যের শীতল পাটিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন কারিগররা

শীতল পাটির জন্য বিখ্যাত মৌলভীবাজার। জেলার রাজনগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় এই পাটি। বর্তমানে এ পাটি তৈরিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন কারুশিল্পীরা। সঠিকভাবে বাজারজাত, মূলধন না থাকা, মুর্তা বেত কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এখন বিলুপ্তির পথে এই শিল্প।

Advertisement

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ (আইসিএইচ) ইউনেস্কোর ১২তম অধিবেশনে বিশ্বের নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (দি ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি) হিসেবে রাজনগরের শীতল পাটিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ ‘মুর্তা’ থেকে তৈরি হয় শীতল পাটি। কয়েক যুগ ধরে এ পাটি তৈরি করে আসছেন রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিল বাড়ী গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ দীগেন্দ্র দাশ।

তিনি বলেন, পাটি শিল্পে তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। দাদা রামচরণ দাশ ও বাবা দীনেশ কুমার দাশ এ পেশায় ছিলেন। তাদের দেখে এ পেশায় জড়ান তিনি। তার এলাকায় পাটি তৈরি করা শ্রীকান্ত দাশ, রমা কান্ত দাশ, নিরদ দাশ, সুধির দাশ, অগদুর দাশ, পুরঞ্জয় দাশ, রঞ্জয় দাশ, রাইমন দাশ, অষ্টিনি দাশ বর্তমানে তাদের কেউ বেঁচে নেই।

Advertisement

তবে তার ভাই সত্যরঞ্জন দাশ কৃষি কাজের পাশাপাশি পাটি তৈরি করেন। গত সেপ্টেম্বরে উপজেলা পরিষদের আয়োজনে ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণেও অংশ নেন সত্যরঞ্জন।

তিনি বলেন, একটি পাটি তৈরি করতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগে। নকশা ছাড়া একটি পাটির চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে অর্ডার দিয়ে মসজিদ, মন্দির, মিনার কিংবা ব্যক্তির নাম দিয়ে তৈরি করলে দাম পড়ে ২৫ হাজার টাকা।

তিনি আরও বলেন, এ পেশায় ৬৫-৬৬ বছর হয়ে গেল। এখন আর আগের মতো চোখেও দেখতে পাই না। এমনকি আগের মতো পাটিও বিক্রি হয় না। সরকার থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতাও পাই না। যার কারণে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে।

একই ইউনিয়নের তুলাপুর গ্রামের গীতেশ চন্দ্র দাশ জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৭ সালে ইউনেস্কোর সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। এ সময় জাপান ও চীনে যান গীতেশ।

Advertisement

তিনি জানান, বিভিন্ন রঙের নামের পাটির মধ্যে রয়েছে সাদা পাটি, গুছি রঙ্গা পাটি, আসমান তারা, চৌদ্দ ফুল, কমল গুশ পাটিসহ হরেক রকম পাটি। এছাড়াও এখন মুর্তার বেত দিয়ে তৈরি করছেন কলমধানি, ভ্যানিটিব্যাগ, কোর্ট ফাইল, মানিব্যাগ, ওয়ালম্যাট ও জায়নামাজ।

তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা পাননি। শুধু ইউনেস্কোর সম্মেলনে যেতে খরচ দিয়েছিল। আর বিভিন্ন সময় কারুশিল্পের মেলা হলে বলা হয়। এছাড়া আর কোনো ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

গীতেশ চন্দ্র দাশের ছেলে কালা চাঁদ দাশ হৃদয় বলেন, করোনাকালে পাটি বিক্রি না হওয়ায় সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। একটি পাটি তৈরি করতে পাঁচশ টাকা খরচ হয়।

শীতল পাটি তৈরি হয় উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ধুলিজুড়া ও উত্তরভাগ ইউনিয়নের যুগিকোনায়। এছাড়াও জেলার বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার ও তালিমপুর ইউনিয়নে এখনও শীতল পাটি তৈরি হয়।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আল আহসান জাগো নিউজকে বলেন, জায়গাগুলো পরিদর্শন করেছি। শীতল পাটির বিকাশে ঋণের জন্য ব্যাংকগুলো থেকে যাতে কারুশিল্পীরা ঋণ পান সে জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা আছে। এছাড়াও শিল্পমন্ত্রণালয় এটি নিয়ে কাজ করছে।

এফএ/এমকেএইচ