২০০৬ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নত করা হয়। তবে কাগজে কলমে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নত হলেও জনবল থেকে গেছে ৫০ শয্যারই। অর্থাৎ দীর্ঘ ১৪ বছরের অধিক সময় ধরে প্রয়োজনের থেকে অর্ধেক জনবল দিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়ে আসছে নিয়মিত।
Advertisement
এদিকে ক্রমবর্ধমাণ জনসংখ্যার কথা চিন্তা করে হাসপাতালটিকে একশ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নত করতে ২০১৭ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে বহুতল বিশিষ্ট নতুন ভবনের। তবে জনবল সংকটে সেটিও চালু করতে পারছে না জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
জানা যায়, বর্তমানে জেলার প্রায় ১৬ লাখ মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র এই হাসপাতালটি। বিশেষ করে সদর, টঙ্গীবাড়ী, সিরাজদিখান ও লৌহজং উপজেলার মানুষ হাসপাতালটির ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। প্রতিদিনই শত শত চিকিৎসাপ্রার্থী হাসপাতালটিতে চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক জনবলের কারণে সেবা প্রত্যাশীরা সঠিক সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অপরদিকে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধির বন্দোবস্ত করতে ২০১৩ সালে ১৫০ শয্যা ধারণক্ষমতার নতুন ভবনটি তৈরির কাজ শুরু হয় যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে ৩৩ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ভবনটির ৩ বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। সমস্যা একই ‘জনবল সংকট’। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে ভবনটির কিছু অংশ ব্যবহার করা হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য।
Advertisement
সরজমিনে দেখা যায়, একশ শয্যার পুরাতন ভবনের পূর্বে ৫তলা ভবনটি পুরোপরি প্রস্তুত। বর্তমানে সেটিতে করোনা ইউনিটের কার্যক্রম চলছে। নতুন ভবনটিতে আইসিইউ, সিসিইউসহ বেশ কিছু সুবিধা থাকছে। তবে বহুমুখি সুবিধার সুযোগ থাকলেও উদ্বোধন না হওয়ায় রোগীদের পুরাতন ভবনেই চিকিৎসা নিয়ে দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে।
নতুন ভবনের বিষয়ে জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান জানান, ভবনটির কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। এরপর ২০১৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য বিভাগকে ভবনটি বুঝে নিতে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের যেসব কাজ ছিলো সেটি সম্পূর্ণ করেই হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। দু’মাস আগেও তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
এখন কবে নাগাদ ভবনটি উদ্বোধন করা হবে সেটি স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর নির্ভর করবে। তবে ভবনটি উদ্বোধন করতে গিয়ে যদি কোনো কারিগরি সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে সেটি গণপূর্ত করবে।
এসব বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, দীর্ঘদিন অর্ধেক জনবল দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে ডিজি বরাবর ও মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হয়েছে। একশ শয্যার জনবল নিশ্চিত করতে কনসালটেন্ট, মেডিকেল অফিসারসহ বিভিন্ন পদে ৬৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে অনুমোদন হয়েছে। অচিরেই লোকবল পাব আমরা। এরমধ্যে ২০ জন ডাক্তার , ২২ জন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও ২২ জন আউটসর্সিংয়ের পদ থাকবে।
Advertisement
নতুন ভবনের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, উদ্বোধনের জন্য পিডাব্লিউবি থেকে বলা হয়েছে তারা ভবনটি নতুন করে রঙ করে দেবে। এছাড়া কোনো জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে থাকলে মেরামত করে দেবে। এ বিষয়ে হাসপাতালের কয়েকজনকে নিয়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের পুরনো একশ শয্যার হাসাপাতালটিতেই পর্যাপ্ত জনবল নেই, এরমধ্যে নতুন করে ভবন নির্মাণ ও ২৫০ শয্যা করা হয়েছে। জনবল সংকটে সেটির কার্যক্রমও শুরু করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ভবনটি চালু করতে হলে যন্ত্রপাতি ও আসবাব পত্রের প্রয়োজন। সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখে পাঠানো হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ আছে, নতুন ভবনটি চালু হলে সেবা গ্রহীতারা বেশি সেবা পাবে।
তিনি বলেন, ২৫০ শয্যার জনবলের বিষয়ে জনপ্রশাসন অনুমোদন দিয়েছে , সেটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। যদি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হয়ে আসে তাহলে পুরো ২৫০ শয্যার জনবলই পাওয়া যাবে। তবে কবে এটি হবে তা বলা যাচ্ছে না।
এফএ/এমকেএইচ