জাতীয়

পদ্মার রেল সংযোগ: ঠিকাদার বলছে ‘টাকা দেয় না’, পিডি বলছে ‘সঠিক না’

বাংলাদেশ সরকার একই দিনে পদ্মা সেতু ও এর রেলপথ উভয়ই উদ্বোধন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরইসি) অভিযোগ, বাংলাদেশ সরকার অর্থ ছাড় দিচ্ছে না। এখন সঠিক সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন তারা।

Advertisement

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সিআরইসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বুধবার রাতে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) প্রকৌশলী গোলাম ফখরুদ্দিন এ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘তাদের এই তথ্য সঠিক না।’

প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য, ‘এই প্রেস রিলিজ সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন? আপনি সিআরইসিকে জিজ্ঞাসা করবেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন যে, কতখানি সত্যতা আছে এটার। তার কাছে কী তথ্য আছে, তাকে জিজ্ঞাসা করেন।’

Advertisement

‘তহবিল সংকটে বিপর্যয়ের মুখে দেশের মেগা প্রকল্প- পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প (পিবিআরএলপি)’ শিরোনামে দেয়া সিআরইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের জুন মাসের শেষ দিকে তারা কাজ শুরুর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পেমেন্ট (মোবিলাইজেশন পেমেন্ট) পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ কারণে গত সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত তারা আর কোনো পেমেন্ট পায়নি। এই দীর্ঘ সময়ে প্রকল্পের গতি সচল রাখার জন্য সিআরইসি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বৃহৎ অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করে।

সিআরইসি প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক প্রতিটি ইন্টেরিম বা অন্তর্বর্তীকালীন পেমেন্ট (আইপি) সম্পন্ন করতে তাদের প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি সময় লেগেছে। উদাহরণস্বরূপ, সিআরইসি ২০২০ সালের জুন-সেপ্টেম্বর সময়কালের প্রকল্প ব্যয়ের জন্য আইপিসেভেন জমা দেয় ওই বছরের ২৭ অক্টোবর। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্যয়ের বৈদেশিক অংশের নিষ্পত্তি প্রসঙ্গে চীন এক্সিম ব্যাংককে নির্দেশনা দিতে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কালক্ষেপণ করেছে।

অন্যদিকে প্রকল্পের স্থানীয় ব্যয়ের অংশটুকুও বাংলাদেশ রেলওয়ের যথাযথ পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে আটকে রয়েছে। স্থানীয় ব্যয়ের নিষ্পত্তির আগে চীন এক্সিম ব্যাংক যেহেতু বৈদেশিক অংশের নিষ্পত্তির করবে না, তাই ১১৫ দিনেরও বেশি অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সিআরইসি আইপিসেভেন-এর জন্য কোনো টাকা পায়নি।

সিআরইসির দাবি, তারা কেবলমাত্র ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সম্পাদিত কাজের জন্য টাকা পেয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে খরচ করা অর্থের যোগান প্রসঙ্গে এখনো অত্যন্ত ঢিমেতালে কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বকেয়া মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় চারশ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

Advertisement

এ অবস্থায় প্রকল্পের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী কেনা এবং সাবকন্ট্রাকটর ও সাপ্লায়ারদেরকে সময়মতো তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করা সিআরইসির জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতিও কমে এসেছে এবং ব্যয়ের পরিমাণও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিআরইসি’র মতে, ২০২০ সালের জুলাইয়ের মধ্যে তাদের ১০০ কোচ সরবরাহের কথা থাকলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে এখন পর্যন্ত কোচগুলো নির্মাণের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। সিআরইসি’র পক্ষ থেকে একাধিকবার বাংলাদেশ রেলওয়েকে জানানো হয়েছে যে, এই কোচগুলো নির্মিত ও হস্তান্তর হতে দুই বছর সময় লাগবে।

কোভিড-১৯ মহামারির কঠিন সময়ের মধ্য দিয়েও সিআরইসি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ যথাসম্ভব নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এজন্য সম্পৃক্ত প্রতিটি অংশীদারের পক্ষ থেকে যথাযথ সহযোগিতা সিআরইসি’র একান্ত কাম্য।

পিডি/এআরএ