আন্তর্জাতিক

করোনাকালে জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন বিজনেস কার্ড!

এশিয়া ব্যবসায়িক কার্ড অদলবদল না করা পর্যন্ত কোনো বৈঠকই শুরু হয় না। এশিয়ার দেশগুলোতে যে কোনো মিটিংয়ের শুরুতেই এক পক্ষ অপর পক্ষের হাতে বিজনেস কার্ড ধরিয়ে দেয়। এটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, দুই পক্ষই কার্ড গ্রহণ করে মনোযোগ দিয়ে নতুন পরিচিত হওয়া ব্যক্তিটির পদবি ও অবস্থান দেখে নেয়। তার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে, কতটুকু কী বলা যাবে ইত্যাদি বোঝার জন্য এগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তথ্য।

Advertisement

জাপানে কার্ড বিনিময়ের এই সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হওয়া এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, কিভাবে কোন ছুতোয় বা কোন কথার ফাঁকে নিজের কার্ডটি ধরিয়ে দিতে হবে সেটা শেখার জন্য জাপানে অনেক বই পাওয়া যায়, কিছু কোর্সও আছে। সিঙ্গাপুরের বিজনেস নেটওয়ার্কিং কোম্পানি ‘সিইও এশিয়া’র গ্লেন লিম বলেন, ‘যদি নতুন পরিচিত কোনো ব্যক্তি আমাকে তার কার্ড দিতে ব্যর্থ হয়, আমি অবধারিতভাবেই তাকে ভুলে যাই।’

কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বিজনেস কার্ড বিনিময়ের এই সংস্কৃতি লাইফ সাপোর্টে আছে। কারণ বেশিরভাগ প্রফেশনাল মিটিং এখন অনলাইনে হচ্ছে। মানুষ কাজ করছে ঘরে বসেই। ব্যবসায়িক আলাপের প্রয়োজনে চা পান, মধ্যাহ্নভোজন ইত্যাদি প্রায় বন্ধই আছে বলা যায়।

অনলাইন মিটিংয়ে নিজের বিজনেস কার্ড ধরিয়ে দেওয়ার সুযোগও থাকছে না। মাল্টিন্যাশনাল প্রিন্টিং কোম্পানি ভিস্তাপ্রিন্ট জানিয়েছে, গত বছর মার্চের শেষ ও এপ্রিলের শুরুতে তাদের বিজনেস কার্ডের অর্ডার শতকরা ৭০ ভাগ কমে গেছে। এখনও বিজনেস কার্ডের অর্ডার আগের মতো আসছে না। মাঝে মাঝে খুব জরুরি প্রয়োজনে মুখোমুখি দেখা সাক্ষাত হলেও মানুষ আগের মতো কার্ড বিনিময় করছে না। সিঙ্গাপুরে কর্মরত একজন ব্রিটিশ ব্যাংকার বলেন, ‘বিজনেস কার্ড দেখতে কেমন আমি ভুলে গেছি। আপনি কিভাবে এগুলো স্যানিটাইজ করবেন?’

Advertisement

এই প্রেক্ষাপটে কিছু কোম্পানি কাগজের বিজনেস কার্ডের বিকল্প উদ্ভাবনের চেষ্টা চালাচ্ছে। জাপানি কোম্পানি নাগায়া উদ্ভাবন করেছে ‘মেইশি’ নামের এক রকম মাস্ক। ওই মাস্কের ওপরে ব্যবহারকারির বিজনেস কার্ডের তথ্যগুলো মুদ্রিত থাকবে।

এই মাস্ক বানানোর অর্ডার নেওয়া শুরু করার পর নাগায়ার ওয়েবসাইটের লেনদেন এক লাফে ৬৫ হাজার শতাংশ বেড়ে গেছে। সানসান নামের আরেকটি জাপানি কোম্পানি উদ্ভাবন করেছে ভার্চুয়াল বিজনেস কার্ড। বিজনেস কার্ড হিসেবে তারা দিচ্ছে একটি কিউআর কোড যা প্রফেশনাল মিটিংয়ের সময় ভিডিও-কনফারেন্সিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে প্রদর্শন করা যায়। ফোন ক্যামেরায় কোডটি স্ক্যান করলে তার বিজনেস কার্ড দেখা যায়। জুনে চালু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৪ হাজার ৩৩৩টি কোম্পানি সানসানের ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবহার শুরু করেছে।

তবে এসব নতুন উদ্ভাবনের ফলে কাগজের বিজনেস কার্ডের জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে এমন নয়। সিঙ্গাপুরের বিজনেস নেটওয়ার্কিং সংস্থা সিও এশিয়ার গ্লেন লিম, যিনি সানসানের ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবহার করেন, তিনি কিন্তু কাগজের কার্ড ফেলে দেওয়ার কথা ভাবছেন না।

এক্সপ্রেসপ্রিন্ট নামে একটি প্রিন্টিং কোম্পানি জানাচ্ছে, গত দুই মাসে তারা প্রচুর বিজনেস কার্ডের অর্ডার পেয়েছে। কারণ সরাসরি দেখা সাক্ষাত, অফিস, মিটিং আবার শুরু হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল টেমাসেকের জনসংযোগ বিষয়ক প্রধান স্টিফেন ফোরশা জানান, করোনার কারণে তিনি বেশ কিছুদিন নিজের বিজনেস কার্ড দেওয়া বন্ধ রেখেছিলেন।

Advertisement

কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তিনি আবার প্রচুর বিজনেস কার্ড বিলাচ্ছেন। এমনকি ভাচুয়াল কার্ডের উদ্ভাবক সানসানের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অপারেশন হেড এডওয়ার্ড সেনজুও তার মানিব্যাগে কিছু কাগজের বিজনেস কার্ড রাখেন; যদি প্রয়োজন পড়ে বা কাউকে দেওয়ার সুযোগ হয়।

সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট

ফারুক ফেরদৌস/টিটিএন/এমকেএইচ