সম্প্রতি কাবা শরিফের একটি প্রতিকৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেটি তৈরি করা হয় ইরাকে। ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত কারাবালায় হজরত ইমাম হুসাইন ইবনে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর সমাধিস্থলে কাছে এটি তৈরি করা হয়। আর এতেই বিশ্বব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মুসলিম উম্মাহ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। তবে কাবা শরিফের প্রতিকৃতি তৈরির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছে। খবর আল-বালাদ ও ইকনা আরবি।
Advertisement
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) দৈনিক সংবাদপত্র আল-বালাদ এক বিবৃতিতে জানায়- ইরাকের কারবালায় হজরত ইমাম হুসাইন ইবনে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাজারের কাছে পবিত্র কাবা শরিফের আদলে একটি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। নির্মিত স্থাপনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কাবা শরিফের প্রতিকৃতি স্থাপনের এ বিষয়টি নিয়ে ইরাকসহ বিশ্বব্যাপী চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তাদের দাবি, পবিত্র কাবা শরিফের আদলে কোনো স্থাপনা তৈরি জঘন্য বেয়াদবি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কাবা শরিফের আদলে নির্মিত এ স্থাপনাটি সাধারণ পর্যটকরা আগ্রহভরে দেখছে। কেউ কেউ এটি সম্মান প্রদর্শন করছে। আবার অনেকেই এটিকে ভক্তি-শ্রদ্ধার সঙ্গে চুমু খাচ্ছে।
Advertisement
হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাজাজের একজন দায়িত্বশীল জানান, কাবা শরিফের আদলে তৈরি স্থাপনাটি এখানে দুই দিনের জন্য রাখা হয়। এরপর তা আবার অপসারণ করা হয়। প্রতি বছর আশুরা ও ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে এ প্রতিকৃতি মাজারের সামনে রাখা হয়। এটা কারবালার স্মৃতি ও ঐতিহ্য।
তবে এর আগে এটি ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্ম এবং তাজিয়া মিছিল উপলক্ষ্যে বেলুচিস্তানের এক চত্বরে রাখা হতো। পরে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসাইন এ প্রথা বাতিল করে দিয়েছিল। এখন আবার তা চালু করা হয়েছে।
কাবা শরিফের প্রতিকৃতি স্থাপনের ব্যাখ্যাহজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাজারের কাছে কাবা শরিফের আদলে স্থাপনা তৈরি ব্যখ্যা দিয়েছেন কারবালার দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। শিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ স্থাপনা তৈরির ব্যাখ্যা দিয়ে কারবালার মৌকেবের অন্যতম পরিচালক আব্বাস মুসাভী বলেন-‘পবিত্র কাবাঘরের প্রতিরূপ স্থাপন করা হয়েছ। এটি কারবালার মানুষের প্রাচীন ঐতিহ্য। যা প্রতি বছর ইমাম আলি ইবনে আবু তালিব এর পবিত্র জন্মবার্ষিকীতে নির্মিত হয়। কারবালার বাসিন্দারা প্রাচীন কাল থেকেই আল-বালুশ স্কয়ারে এই মডেলটি নির্মান ও প্রদর্শন করে আসছেন।’
শুধু কাবা শরিফের প্রতিরূপ কারবালার বাসিন্দাদের একক রীতিনীতি নয়; বরং প্রতি বছর হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাজারের বাবুল ক্বিবলায় জান্নাতুল বাকী’তে শয়িত ইমামগণের রওজা মোবারকের প্রতিরূপও স্থাপন করা হয় বলেও জানান তিনি।
Advertisement
তিনি আরও জানান, ‘এটি কারবালার স্থপতি মরহুম আবদুল রহমান চালু করেছেন, যা কারবালার জনগণের অন্যতম রীতিনীতি। তবে এই সমস্ত রীতিনীতি ইরাকের শাসক সাদ্দামের সময়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং এখন তা পুনরায় চালু করা হয়েছে।
প্রতীকী কাবা তৈরি নিয়ে আলেমদের বক্তব্যকাবা শরিফের আদলে স্থাপনা বানানো নিয়ে রাজধানীর বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্স সেন্টারের মহাপরিচালক আল্লাম মুফতি আরশাদ রহমানী জানিয়েছেন, ‘প্রতীকী কাবা তৈরি ও প্রশিক্ষণ প্রদান স্পষ্ট হারাম। কাবা শরিফ পৃথিবীতে একটাই। এমন করে প্রতীকী কাবা তৈরি করে প্রশিক্ষণ দেয়া হারাম তথা নিষিদ্ধ।
রাজধানীর শাইখ যাকারিয়া রহ. রিসার্স সেন্টারের পরিচালক ও দেশের অন্যতম বিজ্ঞ আলেম মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ-এর মতে, পৃথিবীতে পবিত্র কাবা একটাই। যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন, পবিত্র কাবার প্রতীকী বানানো বৈধ নয়। এমন ঘটনাকে পবিত্র কাবা শরিফ নিয়ে একধরণের উপহাস করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘কাবা ঘরের একটি সম্মান রয়েছে। আমরা সেই ঘরের প্রতীকী বানালে কাবা শরিফের প্রতি মানুষের সম্মান কমে যাওয়ার আশঙ্খা রয়েছে। আমাদের দেশে কতিপয় বেদাতিরা প্রতীকী কাবা বানিয়ে তাওয়াফ করে থাকে এবং তারা বলে এভাবে তাদের হজ আদায় হয়ে যাবে। সেদিকে লক্ষ্য করলেও প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রতীকী কাবা বানানো ফেতনার সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে তা জায়েজ নেই।
এদিকে হজ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রতীকী কাবা বানানোয় কোনো সমস্যা নেই বলে জানালেন ঢাকা মানিকনগর মাদরাসার শাইখুল হাদিস, জামিয়া শায়েখ জাকারিয়া কাঁচকুড়া উত্তরখান উত্তরার ইফতা বিভাগের প্রধান, মুফতি মোহাম্মদুল্লাহ সাদেকী।
ফেতনার আশংকা না থাকলে শেখার জন্য প্রতীকী কাবাসহ অন্যান্য বিষয়গুরো দেখিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এর পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘হজের বিধি-বিধান মানুষের বুঝতে একটু কষ্ট হয়। আর এ বিধান অনেকে জীবনে একবারই পালন করার সুযোগ পান। তাই এ বিধান ভালো করে আত্বস্ত করতে এমন কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। তবে ‘হ্যাঁ’. এক্ষেত্রে ফেতনার অশংকা থাকলে, সেটা ভিন্ন বিষয়।
এমএমএস/এমএস