আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সর্বসাধারণ। তবে শ্রদ্ধা জানাতে আসাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো নিদর্শন দেখা যাচ্ছে না। মাস্ক ছাড়াই অনেকে শহীদ মিনারে আসছেন। আবার যারা মাস্ক পরে আসছেন তাদের একটি বড় অংশ সঠিক নিয়মে না পরে, থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখছেন। সামাজিক দূরত্ব মানার ধারও ধারছেন না কেউ। একজন আরেকজনের শরীরের সঙ্গে শুধু লেগে থাকছে না, ধাক্কাধাক্কিও চলছে।
Advertisement
একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিধিদল, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার ব্যক্তিবর্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে সাধারণ মানুষের জন্য শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ খুলে দেয়া হয়।
মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যে এবারের ভাষা দিবস পালিত হওয়ায় শহীদ মিনারে আগত ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে বিশেষ সতর্কতা। মাস্ক পরা এবং নির্দিষ্ট রুটম্যাপ অনুসরণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করার নির্দেশা রয়েছে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঁচ এবং ব্যক্তি পর্যায়ে দুইজন করে শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার নির্দেশনা কর্তৃপক্ষের।
প্রথমদিকে এ নির্দেশনা মানা হলেও সকাল ৮টার পর থেকে সেই দৃশ্য আর দেখা যাচ্ছে না। সামাজিক দূরত্ব না মেনেই দলবেঁধে বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা শহীদ মিনারে প্রবেশ করছেন। এমনকি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে ব্যানার ও ফুলের বেদি হাতে ধাক্কাধাক্কি করতেও দেখা গেছে।
Advertisement
শুধু শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তো নয়ই, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না রাস্তাগুলোতেও। দলবেঁধে মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে হেঁটে হেঁটে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রবেশ করছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষগুলো। রাস্তায় তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য কাউকে কোনো ধরনের পরামর্শ বা নির্দেশনা দিতে দেখা যাচ্ছে না।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা একদল যুবকে দোয়েল চত্বর এলাকায় জড় হতে দেখা যায়। এদের অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। আবার যারা মাস্ক পরেছেন, তাদের অনেকে তা থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন।
কামরাঙ্গীরচর থেকে আসা এসব যুবকদের একজন হৃদয়, থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন তো স্বাস্থ্যবিধি কোথাও মানা হয় না। আমি থুতনিতে মাস্ক ঝোলালে সমস্যা কী?’
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মাস্ক ছাড়াই দলবেঁধে অপেক্ষা করা খায়রুল হক নামের একজন বলেন, ‘শুধু আমি একা নই। তাকিয়ে দেখেন, এখানে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। রাস্তার কোথাও কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলেননি। আসলে এখন তো আর কোনোকিছুই মানা হচ্ছে না। যে যার মতো চলছে।’
Advertisement
শহীদ মিনারে প্রবেশের অপেক্ষায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকা রোমেল নামের একজন বলেন, ‘এখন করোনা নিয়ে আর কারো মনে ভয় নেই। শুরুতে করোনার যে আতঙ্ক ছিল তা কেটে গেছে। এ কারণে এখন কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না।’
থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রবেশ করা হাসান আদনান নামের একজনকে প্রশ্ন করা হয় মাস্ক সঠিক নিয়মে পারেননি কেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে অস্বস্তি লাগে। তাছাড়া মাস্ক পরার কথা তো কেউ বলছে না। আর মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে আসছে তাতে মাস্ক পরে কী হবে?’
এমএএস/ইএ/এমএস