মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার শ্রীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ। এ শিক্ষার্থী জানে না শহীদ মিনার কী। কাছ থেকে কখনো দেখেওনি সে।
Advertisement
একই স্কুলের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার। সে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনার দেখেছে বাবার সঙ্গে। কিন্তু নিজেদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় কখনো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি। ভাষা শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ মিনার সম্পর্কে ধারণা নেই তার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শ্রীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু এ স্কুলে শহীদ মিনার নেই। শুধু তাই নয় শহীদ মিনার নেই মানিকগঞ্জের ৫০৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এছাড়া জেলার অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও নেই শহীদ মিনার। ফলে এখানকার হাজার হাজার শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করতে পারে না। তবে এসব বিদ্যালয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিতে কাগজে আঁকা ছবি, বাঁশ অথবা কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা জানায় শিক্ষার্থীরা।
শ্রীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা খানম বলেন, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় ২১ ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারি না। বইয়ের পাতায় শহীদ মিনার থাকলেও বাস্তবে দেখতে না পেয়ে শিক্ষার্থীদের এর প্রতি আগ্রহ জন্মায় না। বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে ছোটবেলা থেকেই দেশপ্রেম জাগ্রত হতো।
Advertisement
বরাদ্দ না থাকায় বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, বর্তমান সরকার অবকাঠামোসহ বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অনেক টাকা খরচ করছে। এর সঙ্গে যদি শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করত তাহলে এই সমস্যা থাকত না।
তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শিবালয় উপজেলার সাহিলী গ্রামের বাসিন্দা সায়েদুর রহমান জানান, তার এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। স্থানীয় সাহিলী একতা সমাজ কল্যাণ সংঘের উদ্যোগে স্কুল মাঠে প্রতিবছর কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। এরপর এলাকার যুব সমাজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
Advertisement
মানিকগঞ্জের সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগো বাংলা ইয়ুথ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল (বর্তমান রফিক নগর) গ্রামে। অথচ সেই জেলার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এটা সত্যিই লজ্জার এবং হতাশার।
তিনি মানিকগঞ্জসহ দেশের সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি উদ্যোগের দাবি জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার অধিকারী বলেন, মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ৬৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫০৩টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে প্রতিটি বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিএম খোরশেদ/আরএইচ/এমএস