বিনোদন

সিরাজগঞ্জের মঞ্চে মুগ্ধতা ছড়ালো বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’

পিনপতন নিরবতায় দর্শকের চোখ তখনও মঞ্চে। দৃশ্যপট বদলে এবার কথা বলছেন বঙ্গবন্ধু। পুরো অডিটোরিয়াম নিস্তব্ধ। মঞ্চের এক কোনে পাইপ টানছেন। স্মৃতিচারণ করছেন আর বলছেন জেলখানার ঘটে যাওয়া ঘটনা। ভাবছেন দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা।

Advertisement

নাটকের শুরুতেই দেখা মেলে বঙ্গবন্ধু জেলখানার গরাদে ভাবগাম্ভীর্যতায় পাইপ টানছেন। দর্শকের চোখ তখন বঙ্গবন্ধুর দিকে। এখনই হয়তো তিনি বলে উঠবেন, ‘আর আমাদের দাবায়া রাখতে পারবা না।’

কিন্তু দৃশ্য তখন বদলে গেছে। কথা বলে উঠলেন শেখ হাসিনা। বললেন তার পিতার লিখে যাওয়া ইতিহাসের কথা। ‘কারাগারের রোজনামচা’ নাটকে জাতীয় পতাকায় জড়িয়ে বালিকা অভিনেত্রীর আবেগঘন শেষ সংলাপে অশ্রু সজল হয়ে পড়েন দর্শকরা।

নাটক শেষ হলেও পাঁচ শতাধিক দর্শক তখনো আসন ত্যাগ করেননি। এ যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ।

Advertisement

গেল ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী সন্ধ্যা ৭টায় সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী রচনা ‘কারাগারের রোজনামচা’ অবলম্বনে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। দেশে এ নাটকটি প্রথমবারের মতো মঞ্চায়ন হলো এখানেই।

মঞ্চও যে কখনো কখনো হয়ে উঠে ইতিহাসের পাতা তারই প্রমাণ মিললো যেন ‘কারাগারের রোজনামচা’ মঞ্চায়নেও। বঙ্গবন্ধু, জেলখানা, শোষকের অত্যাচার আর জীবনের নানা কথার পঙ্তিমমালা দর্শককে আন্দোলিত করেছে বারবার।

নাটকটি উপভোগ করতে মঞ্চে সেদিন উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মাচারি, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিককর্মী, সমাজসেবীরাও।

মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি নাট্যদল এ নাটকটি মঞ্চায়ন করেছে। কারাগারের রোজনামচা রচনাটিকে নাট্যরূপ দিয়েছেন শাহীন রহমান এবং নির্দেশনায় ছিলেন জেলা কালচারাল অফিসার মাহমুদুল হাসান লালন।

Advertisement

নাটক চলাকালিন সময়ে পুরো মঞ্চই যেন ফিরে গেছে ৭০ দশকের পূর্ব বাংলায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাজীবনের পূর্ণগল্প তুলে ধরা সম্ভব হয়নি নাটকটিতে। তারপরও বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, মানুষের প্রতি ভালবাসা, কারা অভ্যন্তরেও দরাজ কন্ঠে স্বৈরাচারী শাসক প্রতিনিধিদের অত্যাচারের প্রতিবাদের চিত্রগুলো নিগুঢ়ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

৫২ পৃষ্ঠার ডায়েরি থেকেই কারাগারের রোজনামচা রচনা। আর এ থেকেই নাটক।

আতাউর রহমান বরাত নামে এক অধ্যাপক ছিলেন দর্শকসারিতে। তিনি অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘আমি অভিভূত। বঙ্গবন্ধুর কারাগারের জীবন, তার ব্যক্তিত্ব, অসাধার নেতৃত্বের গুণাবলী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ নাটকে। প্রত্যেকটা দৃশ্য এত জীবন্ত ও প্রাণবন্ত ছিলো যে মনে হচ্ছে যেন চোখের সামনে ওই সময়টা দেখতে পাচ্ছি।’

বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করা রাসেল আহম্মেদ বলেন, ‘এটা অসাধারণ একটি অনুভূতি।’

অভিনেত্রী নীলা রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে দারুণ লাগছে। কখনো জেলের কয়েদী আবার কখনো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চরিত্রে অভিনয় করা সৌমিত্র চন্দ্র দাস শ্রাবণ বলেন, আমার জীবনের এটি প্রথম মঞ্চ নাটক। প্রথম মঞ্চে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে করা কোন নাটকে অভিনয় করতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’

কারাগারের রোজনামচা নাট্যায়নকারী শাহীন রহমান বললেন, ‘আমি যখন রচনাটি পড়েছি তখন আমার কাছে মনে হয়েছে একজন গল্প বলছে আমি শুনছি। আমি সেই অনুভবটি দর্শককে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

নাটকের নির্দেশক মাহমুদুল হাসান লালন বলেন, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি এই নাটকটি মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর কারাগারের দিনলিপি সহজ ভাষায় মানুষ মানুষে ছড়িয়ে দিতেই এই আয়োজন।’

সিরাজগঞ্জ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ গৌর বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের উপর করা নাটকটি দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। দ্বিতীয় দিনেও হাউজফুল মঞ্চ সেটা প্রমাণ করেছে।’

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. কে এম হোসেন আলী হাসান বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন নিয়ে করা এ নাটকটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি যেন ৭০ দশকে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।’

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মেদ বললেন, ‘শিল্পকলার যেকোন অনুষ্ঠানেই এখন থেকে এই নাটক প্রদর্শন করা হবে। বঙ্গবন্ধুকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এমন আয়োজন আগামীর প্রজন্মের মানুষকে ইতিহাস জানাতে সহায়ক হবে।’

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এলএ/এমকেএইচ