জাগো জবস

৫ হাজার টাকায় লাখ টাকার মালিক শাহানাজ

গ্রামবাংলার আর দশটা মেয়ের মতই গৃহিণী শাহানাজ পারভীন নাজ (৩৩)। ভালোবাসেন কেনাকাটা করতে। সংসারের বাজার খরচ থেকে জমিয়েছিলেন ৫ হাজার টাকা। সেই টাকা থেকে এখন তিনি লাখ টাকার মালিক। রাজশাহীতে তিনি একজন ‘সফল নারী উদ্যোক্তা’।

Advertisement

শাড়ি থেকে সবজি যা-ই হোক না কেন, বাজার কিংবা অনলাইন থেকে কেনাকাটা করতে ভালোবাসেন নাজ। ভালোবাসেন উপহার দিতে। আর তাই নিজের চেয়ে পছন্দ করেন অন্যের জন্য কিনতে। অধিকাংশ কেনাকাটাই করতেন অনলাইন থেকে। দেশের বিভিন্ন জায়গার উদ্যোক্তাদের কাছে থেকে কিনতেন পণ্য।

ইতোমধ্যে মাসখানেক আগে ‘রাজশাহীর উদ্যোক্তা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের গেট টুগেদারে অংশ নেন নাজ। এছাড়াও ই-আলাদীন নামে একটি মিট-আপ অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেন। তাদের দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার সাধ জাগে মনে।

প্রথম উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা আসে ২০১৯ সালে নভেম্বর মাসের দিকে। মনে মনে অনলাইন বিজনেস শুরু করবো করেও শুরু হয়নি তখন। কারণ তার নবজাতক কন্যাসন্তানের বয়স মাত্র আড়াই মাস। এজন্য চিন্তায় আসে বিরতি। থামতে হয় কয়েকমাস। তবে পরিপূর্ণভাবে বিজনেস শুরু করে দেন ২০২০ সালে জুলাই মাস থেকে।

Advertisement

মাত্র ৮ মাসেই ৫ হাজার টাকার ইনভেস্ট লাখ টাকায় পৌঁছেছে। কখনো খাতা-কলমে হিসাব রাখেননি। তবে লাভের অঙ্ক না বলতে পারলেও তিনি জানান, বর্তমানে অর্ধেকের বেশিটাই লাভের অংশ। বাকি অর্থগুলো যোগ করেছেন সফলতার কারণে। তবে আসন্ন মে মাসে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিনিয়োগ বাড়াবেন দ্বিগুণ।

প্রথমদিকে পরিচিত এক আত্মীয়ের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি থেকে পিনন কাপড়ের পার্স সংগ্রহ করেন। তার সাথে ঢাকার ইসলামপুর ও বাবু বাজার থেকে সংগ্রহ করেন শাড়ি ও থ্রিপিস। পরে যোগ হয় হিজাব, পাঞ্জাবি, বিছানার চাদর, টুপিসেট, পাটের ব্যাগ, শিকা, মোমবাতি। অর্গানিক ফুড হিসেবে যোগ করেন খেজুরের গুড় ও মধু।

তবে শীতের সময়কে কাজে লাগিয়েছেন ভিন্নভাবে। স্বামীর মাধ্যমে রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী গ্রামের গাছিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন খেজুরের রস। নিজের স্কুল-কলেজের বন্ধু, রাজশাহীর উদ্যোক্তা গ্রুপ ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি করেছেন প্রায় ৩০ লিটার খেজুরের সর। ক্রেতাদের প্রচুর চাহিদা ছিল। কিন্তু ডেলিভারিম্যান ও সাংসারিক ব্যস্ততায় সবার চাহিদা পূরণ করতে পারেননি।

ঘরে বসেই অনলাইনে যোগাযোগ করেন বিভিন্ন উদ্যোক্তার সাথে। এরপর পণ্যের কেনাবেচা। সৈয়দপুর থেকে নেন শিকা। পাটের ব্যাগ আনেন টাঙ্গাইল থেকে। শাড়ি, থ্রিপিস, বিছানার চাদর সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ঢাকা থেকে। তবে খাদি পাঞ্জাবি ও শাড়ি আনেন কুমিল্লা থেকে। কুরিয়ারের মাধ্যমে আনেন এসব পণ্য। তবে রাজশাহীতে বাটিকের পাঞ্জাবি, হিজাব, গুড় ও মোমবাতি সংগ্রহ করেন। তারপর পরিচিত সবার কাছে পান অর্ডার।

Advertisement

উদ্যোক্তা শাহানাজ পারভীন নাজ বলেন, ‘প্রথমে আমি ফেসবুক আইডির ফ্রেন্ডদের কাছে পণ্য বিক্রি শুরু করি। পরে ‘রাজশাহীর উদ্যোক্তা’ ও ‘দূরন্ত রাজশাহী’ নামের ফেসবুক গ্রুপে, আমার স্কুল-কলেজের বন্ধুদের পেজ ও গ্রুপে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্য সেল করি। এছাড়াও পরিচিত, প্রতিবেশী, আত্মীয়দের কাছে পণ্য বিক্রি করি। সাড়াও মেলে সন্তোষজনক।’

পরিচিত, বন্ধু ও আত্মীয়দের কাছে নিজে ডেলিভারি দিলেও অপরিচিতদের পণ্য পাঠান হোম ডেলিভারি ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। মাঝে মাঝে অবসরে এসব কাজে কিছুটা সাহায্য মেলে তার স্বামীর কাছ থেকেও।

শাহানাজ পারভীন নাজ রাজশাহী কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। বাবার আদরের দুই কন্যার বড় তিনি। সংসার জীবনে ৮ বছর হয়েছে। স্বামী মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। ১৬ মাস বয়সী কন্যাসন্তান সোহাকে নিয়ে তাদের সংসার।

ভালো লাগার বিষয়ে উদ্যোক্তা শাহানাজ বলেন, ‘শুধু কেনাকাটাই নয়; আমার ঘুরে বেড়াতেও ভালো লাগে। ভালো লাগে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। ভালো লাগে কবিতা লিখতে। এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক কবিতাও লিখেছি আমি। তবে কোনোটা ছাপা হয়নি পত্রিকা বা বই আকারে। ইচ্ছা আছে একবারের জন্য হলেও কবিতার বই বের করার। সেটাও বেচবো ক্রেতাদের কাছে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তা হিসেবে কোনো ট্রেনিং নেই আমার। আমার মেয়েটা একটু বড় হলেই বিডা ও বিভিন্ন ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং করার ইচ্ছা আছে। ট্রেনিং ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীতে পাইকারি সেলে যাবো। সেই সঙ্গে ইচ্ছা আছে, প্রতিটি জেলায় দু’চার জন করে ‘রিপিট কাস্টমার’ তৈরির। তারাই হবেন আমার মুনাফা তৈরির মেশিন।’

এসইউ/এএসএম