অর্থনীতি

আরও চার হাজার কোটি টাকা হারালো শেয়ারবাজার

পতনের মধ্য দিয়ে আরও একটি সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের দরপতনে চার হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ সপ্তাহের পতনে ৩৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে হারালো শেয়ারবাজার।

Advertisement

বড় অঙ্কের বাজার মূলধন হারানোর পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে কমেছে প্রধান মূল্যসূচক। তবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে দশমিক ১৬ শতাংশ। আর লেনদেন বেড়েছে প্রায় নয় শতাংশ।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৬৫ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। যা এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল চার লাখ ৬৯ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার ৫২ কোটি টাকা।

আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে নয় হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। তার আগের তিন সপ্তাহে কমে চার হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, আট হাজার ২৭৭ কোটি টাকা এবং নয় হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এ হিসাবে টানা পাঁচ সপ্তাহের পতনে ডিএসই ৩৬ হাজার ৫১ কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে।

Advertisement

অবশ্য এর আগে টানা সাত সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল। বাজার মূলধন বৃদ্দি বা কমে যাওয়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে। সে হিসাবে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধির পর ৩৬ হাজার ৫১ কোটি টাকা কমেছে।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৯ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট বা দশমিক ১৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৬২ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তার আগের তিন সপ্তাহে কমে ৭৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ১১১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং ৭৩ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৪৩৩ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্যসূচকরে পাশাপাশি টানা পাঁচ সপ্তাহ পতন হয়েছে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে পাঁচ দশমিক ১২ পয়েন্ট বা দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এই সূচকটি কমে ৬৩ দশমিক শূন্য চার পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯০ শতাংশ। তার আগের তিন সপ্তাহে কমে ১৭ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৮০ শতাংশ, ১৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং ২৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।

তবে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক টানা চার সপ্তাহ পতনের পর গত সপ্তাহে কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ৬ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২৪ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৯৮ শতাংশ। তার আগের তিন সপ্তাহে কমে ১৯ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৪৯ শতাংশ, ১৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১০ শতাংশ এবং ২৮ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ১৮ শতাংশ।

Advertisement

প্রধান মূল্যসূচকের পতন হলেও গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে, বেড়েছে তার থেকে বেশি। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১২৭টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ১২২টির। আর ১১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৮৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮১৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকা বা ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে চার হাজার ৪৩৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় চার হাজার ৮৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩৫১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা আট দশমিক ৬০ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘এ’ গ্রুপ বা ভালো কোম্পানির অবদান ছিল ৫৮ দশমিক দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এছাড়া ‘বি’ গ্রুপের ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ‘জেড’ গ্রুপের দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রুপের নয় দশমিক ৩৭ শতাংশ অবদান ছিল।

গত সপ্তাহে ডিএসইর মূল বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, রবি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, সামিট পাওয়ার, ওয়ালটন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস।

এমএএস/এএএইচ/এএসএম