আজ শুক্রবার (২০ নভেম্বর) কবি সুফিয়া কামালের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশের নারী ও মানবাধিকার আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব কবি সুফিয়া কামাল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।তিনি ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও মা সাবেরা বেগমের কাছেই বাংলা পড়তে শেখেন এই মহিয়সী নারী। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।৬৮টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্লাটফরম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি এ উপলক্ষে এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে। “সন্ত্রাস-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, প্রতিরোধ গড়ি” শ্লোগান নিয়ে শনিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামাল বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দ আজিমপুর কবরস্থানে কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা এতে অংশ নেবেন।কবি সুফিয়া কামাল তার সাহিত্য চর্চ্চার পাশাপাশি নারীমুক্তি, মানবমুক্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে গেছেন। তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনেও যোগ দেন। ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন। একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তমখা এ ইমতিয়াজ’ উপাধি বর্জন করেন। তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সংগঠক। ১৯৭০ সালে বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্যেই তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কচি কাচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দেশবিভাগের আগে ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন।১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশের মধ্যে দিয়ে কবি সুফিয়া কামালের কাব্য প্রতিভার প্রকাশ ঘটে। তার রচিত সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে কবিতা, গল্প ও ভ্রমণ কাহিনী। তার ‘একাত্তরের ডায়েরি’ একাত্তরে বাঙালি জীবনের অকথিত চিত্র তুলে ধরেছে। সাহিত্য সৃষ্টি, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ প্রায় ৫০টির ও বেশি পুরস্কার লাভ করেন।স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপোষহীন। তিনিই প্রথম বাঙালি নারী যাকে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।বিএ
Advertisement