প্রাচীনকাল থেকে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ভেষজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করে রোগের চিকিৎসা করতো। এখনও এসব উদ্ভিদ বা গাছ দিয়ে রোগের চিকিৎসার প্রচলন রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও ভেষজ ওষুধ ব্যবহারে উৎসাহিত করছে।
Advertisement
জরুরি প্রয়োজনে ভেষজ গাছ অনেক সময় হাতের নাগালে পাওয়া যায় না। এ কারণে আমাদের বসত বাড়ির আশপাশে গড়ে তোলা উচিত পারিবারিক ভেষজ বাগান। জেনে নেয়া যাক কোন ভেষজ উদ্ভিদের কী গুণ। সেই সাথে কোন কোন গাছ আপনার পারিবারিক ভেষজ বাগানে রাখবেন।
অর্জুন: এ গাছের ছাল বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ নরম শিকড়ও ব্যবহার করেন। হৃদরোগ, রক্ত আমাশয়, রক্তচাপ, উদরাময়, অর্শরোগ, মূত্র বর্ধক এসব রোগ সারায়। ছারের রস চিনি ও দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। মেছতা ও ক্ষয়কােশ মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। তাই আপনার পারিবারিক ভেষজ বাগানে এই গাছটি অবশ্যই রোপণ করবেন।
আমলকি: আমলকি ত্রিফলার এক সদস্য ফল। বহুগুণে গুণান্বিত আমলকি একক বা ত্রিফলা গোত্রের অন্য দু’ সদস্যের সাথে অনেক রোগের উপশম করে। পেটের পীড়া, রক্তহীনতা, চর্মরোগ, গণোরিয়া, জ্বর, চুল উঠা, রুচিবর্ধন, আমাশয়, জন্ডিস, অজীর্ণত, কাশি, পেট ফাফা, বমির জন্য দারুণ কাজ করে। কাঁচা পাতা বা শুকনা ফল সর্বঅবস্থায়ই উপকারী। তাই আপনার পারিবারিক ভেষজ বাগানে এই গাছটি অবশ্যই রোপণ করবেন। এ গাছটিও লাগাবেন।
Advertisement
বহেড়া: ত্রিফলা গোত্রের দ্বিতীয় সদস্য। সাধারণত ফলই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমলকির মতো কাজ ছাড়াও হৃদরোগ ফুসফুস, চক্ষু, নাসিকা ও গলঅর রোগে ভালো উপকার করে। তাই আপনার পারিবারিক ভেষজ বাগানে এই গাছটি অবশ্যই রোপণ করবেন।
হরিতকি: ত্রিফলা গোত্রের তৃতীয় সদস্য জন্ম বৈশিষ্ঠ্য গুণাগুণে বহেড়ার খুব কাছাকাছি। আমলকি বহেড়ার মতো কাজ করে। তাছাড়া হাঁপানী পিত্তরোগ, ডেটেবাত, গলার রোগ, দন্তরোগ ও চক্ষুপ্রতদাহে ব্যবহৃত হয়। তাই আপনার পারিবারিক ভেষজ বাগানে এই গাছটি অবশ্যই রোপণ করবেন।
আকন্দ: আকন্দ পাতা, ছাল, শিকড়, ফুল এবং কষ ব্যবহৃত হয়। বুকের সর্দি এবং অন্যান্য ব্যথায় সেক উত্তম। ফুল হাঁপানিতে ও যকৃত রোগে ব্যবহৃত হয়। আঠা দাদে পাতা সিদ্ধ পানি ঘায়ে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া কানব্যথা, শরীরের অন্যান্য ব্যথা, ফুলা কমাতে পাতা ব্যবহৃত হয়। পাতা ও মূলের নির্য়াস তলপেটে টিউমার, ফোঁড়া, ক্যান্সার, সিফিলিস, কুষ্ঠ, অর্শ, চর্মরোগ সারাতে সেবন করা হয়।
অশোক: ছাল, পাতা, ফুল ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ছাল এবং পাতার রস ঋতুস্রাব, রক্তাক্ত পাইলস, রক্ত আমাশয় নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ফুল যকৃতের অসুখ, সিফিলিস, গর্ভাশয়ের অসুখ সারায়।
Advertisement
উলটকম্বল: পাতা, ছাল, কাণ্ড, মূল, ঋতুস্রাব, গনোরিয়া, ফোঁড়ায় ব্যবহৃত হয়। ডাটার রস, মূলের চূর্ণ ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে দিনে ২বার ৩-৭ দিনে খেতে হয়।
বাসক: বাসক কাশি হাপানি, যক্ষা, বক্ষব্যাধি, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, সর্দি হাঁপানি, যক্ষপিত্তনাশক, রক্ত পরিশোধন, ক্ষয়কাশ, অম্লপিত্ত, মুখের দুর্গন্ধে দারুণ কাজ করে। বাসকের ছাল, পাতা সিদ্ধকরে মধু বা মিছরির সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কালোমেঘ: সম্পূর্ণ গাছ ব্যবহৃত হয়। পাতার রস পেটেরপীড়া, জ্বর, অরুচি, আমাশয়, কুষ্ঠ বলবর্ধক স অন্যান্য সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। কালোমেধের পাতার রস, মুথাচূর্ণ, সিদ্ধ করা পানির সাথে কাঁচা হলদ মিশিয়ে দিনে ২-৩বার করে ২ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।
সর্পগন্ধা: শিকড় পাতা ও গাছের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন রোগের চিহিৎসায় ব্যবহৃত হয়। রক্তচাপ, অনিদ্রা, মস্তিস্ক বিকৃতি, ডায়রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, আমাশয়, অনিদ্র, সাপে কাটার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। সর্পগন্ধার মূল, ছালের গুড়া, কচি পাতার রস, মূলের রস ২ থেকে ৩ চামচ দিনে ২ থেকে ৩ বার ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত সেবন করা যায়।
অর্শ্বগন্ধা: শ্বস রোগ, শেথরোগ, বাত, পিত্তরোগ, রিকেট রোগ, অনিদ্রা এসব রোগে উপকার পাওয়া যায়। অর্শ্বগন্ধার মূল চূর্ণ ক্বাত গাওয়া ঘি, মধু গরম পানি ও কাঁচা দধের সাথে ২ থেকে ৩ চামচ দিনে ২ থেকে ৩ বার ৫ থেকে ৭দিন পর্যন্ত সেবন করলে প্রত্যাশিত উপকার পাওয়া যায়।
ঘৃতকুমারি/ঘৃতকাঞ্চন: পাতার নির্যাস সাধারণত ব্যবহার করা হয়। যে কোনো পোড়ায়, হাত পা জ্বালা পোড়া, মাথা ব্যথা, পেটের পীড়া, চোখের রোগ, জ্বর ও লোল রোগ, যকৃতের রোগ, রক্ত পিত্ত, পেটে বায়ু এসব ক্ষেত্রে ঘৃতকাঞ্চন বেশ কাজ করে। ঘৃতকুমারির শাঁস, রস, প্রলেপ দিয়ে অথবা রস মিশরির সাথে সেবন করা যায়। দিনে ২-৩ বার করে ৩-৫ দিন সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।
এমএমএফ/এমএস