শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসবে মেতেছে আদিবাসী গারোরা। এটি গারো সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এবার বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার গারোদের নিয়ে বড় পরিসরে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই দিনব্যাপি ‘রিচ্চাসা দামানি ওয়ানগালা’।বৃহস্পতিবার সকালে মহা খ্রিস্টযোগের (বিশেষ প্রার্থনা) মাধ্যমে শুরু হয় ‘ওয়ানগালা’ (নবান্ন) উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। দুপুরে জেলা প্রশাসক ডা. এএম পারভেজ রহিম উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এসময় খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের বনানী মেজর সেমিনারির সহকারী পরিচালক রেভারেন্ড ফাদার জুলিয়ান রাকসাম এবং আদিবাসী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির গবেষক সৃজন রাংসা লিখিত ‘গারো জাতির ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালার গুরুত্ব ও তাৎপর্য: ওয়ানগালাখো আবাচেং আনি খাৎমা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আদিবাসী নেতা সুদিন চিরান। অন্যান্যের মধ্যে উদযাপন কমিটির নির্বাহী আহ্বায়ক শিক্ষক অঞ্জন আরেং, আহ্বায়ক আলফন্স চিরাণ, অধ্যাপক অঞ্জন ম্রং প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।এতদঅঞ্চলের গারো জনগোষ্ঠীর স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ‘মরিয়মনগর রিচ্চাসা দামানি ওয়ানগালা-২০১৫’ উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বে ‘হান্ড্রেড ড্রামস’ বা ১০০ দামার বাজনায় নেচে ওঠে পাহাড়ি জনপদ। সাংস্কৃতিক কমিটির সদস্য সচিব অঞ্জন ম্রংয়ের নাগড়ার তিনটি দ্রিম দ্রিম দ্রিম করে শব্দ করতেই বেজে ওঠে আদুরির সুর।এরপর গ্রিমচাং গ্রিমচাং দামা ও আদুরির তালে তালে ২৫০ জনের যুবক-যুবতীর দল তাদের নৃত্যশৈলী প্রদর্শন করে। এতে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের মাঝে এক অন্যরকম অনুভুতি, উন্মাদনা এবং আনন্দ দোলা দিয়ে যায়। যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে এক অন্য বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।আজ শুক্রবার সকালে ‘সা-সাৎ সাওয়া (ধুপারতি) ও রুগালা অনুষ্ঠান এবং বিকেলে গারো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ওয়ানগালা উৎসব। সমাপনী অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. প্রমোদ মানকিন এমপি অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।মরিয়মনগর রিচ্চাসা দামানি ওয়ানগালা উৎসব আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সদস্য সচিব অসীম ম্রং বলেন, গারো জনগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে আরো সমৃদ্ধ করা, ঐতিহ্যবাহী গারো কৃষ্টি ও সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহিত করা এবং নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিকট গারো সংস্কৃতিকে তুলে ধরতেই এই মরিয়মনগর রিচ্চাসা দামানি ওয়ানগালা উৎসবের আয়োজন।মরিয়মনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং আয়োজক কমিটির নির্বাহী আহ্বায়ক অঞ্জন আরেং বলেন, মরিয়মনগর-বারমারী-দিগলাকোনার মান্দিরা (গারো) একত্রে যে যেভাবে পারে এই রিচ্চাসা দামিনি ওয়ানগালা করতে আমাদের সাহায্য করেছে। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এই ওয়ানগালার মাধ্যমে আমাদের গারোদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা ধরেছি।হাকিম বাবুল/বিএ
Advertisement