২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনায় আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ৯/১১`র এ হামলার দায় স্বীকার করে আল-কায়েদা জঙ্গিগোষ্ঠী। টুইন টাওয়ারে হামলার পর সন্ত্রাস দমনের নামে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে ও ২০০৩ সালে ইরাকে অভিযান চালায় ইঙ্গ-মার্কিন জোট। তালেবান জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের দমনের নামে দেশ দুটিতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।সর্বশেষ শুক্রবার প্যারিস কেঁপে উঠলো ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের তাণ্ডবে। প্যারিসে আইএসের এ হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ১২৯ জন নিরীহ মানুষ। একপক্ষ লড়ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ও আরেক পক্ষ লড়ছে পশ্চিমা বিরোধী ভাবধারার বিরুদ্ধে। আইএস এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে বর্বরতার সংঘাতের মাঝে প্রাণ হারাচ্ছে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ।এই যুদ্ধযুদ্ধ খেলায় আবারো পশ্চিমা সরকারদের সামনে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হলো। শুধুমাত্র সামরিক চুক্তি ও সমরাস্ত্র নির্মাণকারীরা এ যুদ্ধের ফল পাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশ্লেষক ল্যামিস আনদোনি আলজাজিরায় লেখা এক নিবন্ধে বলেছেন, অধিকাংশ পর্যবেক্ষকই আরব ও মুসলিম অথবা অন্য বা অপর নামে সমাজে বিভাজন তৈরি করে মানুষের জীবনের অবমূল্যায়ন করছেন। কিন্তু প্যারিসের নিষ্পাপ মানুষের রক্তপ্রবাহে আমি দেখছি পুরোমানব সমাজের অবমূল্যায়ন।প্যারিসের হত্যাযজ্ঞের কয়েক ঘণ্টা আগে সুন্নি-আহমাদিয়া দ্বন্দ্বে লেবাননে বিস্ফোরণে কয়েক ডজন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু এসব মানুষের কথা পশ্চিমা গণমাধ্যমে কোনো জায়গা পায়নি। এ বিষয়ে ল্যামিস আনদোনি বলেছেন, মিসরের সিনাইয়ে রুশ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর প্যারিসে হামলা নিয়ে পশ্চিমা বিবৃতিতে যুদ্ধকে পুরুজ্জীবিত করা হয়েছে। ওই বিবৃতি বা বক্তৃতায় রাশিয়া, ফ্রান্স কিংবা আরবের জন্য কোনো সহানুভূতি নেই।ইরাক এবং আফগানিস্তানে পশ্চিমা সরকার বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলা জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদাকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত মার্কিন হামলার পর আল কায়েদা আরো জোরেশোরে সদস্য বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। ৯/১১ হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে যে মনোভাব ছিল তা আরো কঠোর করে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ওই তিন দেশে নিষ্পাপ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছেন।আল-কায়েদা এবং আইএস জঙ্গিরা পশ্চিমাদের শিরশ্ছেদ করে সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করছে কিংবা কোনো বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে আগুন পুড়িয়ে মারছে। অপরদিকে, এর চেয়েও সহজপন্থায় শুধুমাত্র রিমোটের বোতাম টিপেও মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যে নির্যাতন চলছে সেগুলোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে এসব দৃশ্য ক্যামেরায়ও ধারণ করা হয়।ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এ বর্বতায় কোনো অভিযোগ নেই। এদিকে আইএস বিশ্বব্যাপি শুধুমাত্র নিষ্ঠুর বর্বতাই চালাচ্ছে না তারা একটি মতবাদেরও প্রচারণা করছে। তারা ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মনে এক ধরনের ভীতিকর ধারণা তৈরি করছে। আইএসের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও স্বার্থের সঙ্গে যারা একমত নন এমনকি মুসলিম, খ্রিস্টান, আরব অথবা বিদেশিরা নির্বিচারে তাদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছে।সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রসিডেন্ট বলেছেন, হয় আপনি আমাদের পক্ষে অথবা সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নেবেন। ল্যামিস আনদোনি বুশের এই বিভাজনকে আদিম চিন্তাধারার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন।বর্বর এই সংঘাত এবং যুদ্ধ এখনো চলমান। এর মাধ্যমে পশ্চিমের ন্যায় সর্বত্রই স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে। চরমভাবে মানবিকতার লঙ্ঘন ও বৃষ্টির মতো প্রাণহানি এবং ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা বাড়াচ্ছে।এসআইএস/বিএ
Advertisement