ভ্রমণ

রংপুরের ঐতিহ্য ‘তাজহাট জমিদার বাড়ি’

সাজিয়া আফরিন সৃষ্টি

Advertisement

ভ্রমণপিপাসু বাঙালি একটু সুযোগ পেলেই ঘুরতে যান। আমাদের আশেপাশে বেড়ানোর জন্য দর্শনীয় অনেক স্থান রয়েছে! তেমনই রংপুরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থাপনা তাজহাট জমিদার বাড়ি। চাইলে ঐতিহ্যবাহী এ স্থান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।

‘জমিদারি শাসনামল’ প্রাচীন শাসনব্যবস্থার প্রচলন ছিল বাংলাদেশেও। রংপুর জেলার তাজহাট, ডিমলা, কাকিনা, মন্থনা, পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু জমিদার বংশ ছিল। তাদের ছিল বিশাল আয়তনের বেশ কিছু প্রাসাদ।

তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল তাজহাট জমিদার বাড়ি। এটি তাজহাট রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। রংপুর শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে তাজহাট জমিদার বাড়ি অবস্থিত। এ প্রাসাদের একটি অংশকে রংপুর জাদুঘর করা হয়েছে।

Advertisement

তৎকালীন জমিদার মহারাজা কুমার গোপাল রায় প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর। পাঞ্জাব থেকে আগত মান্নালাল রায় এই জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পেশায় তিনি ছিলেন স্বর্ণকার।

উত্তরাধিকারী গোবিন্দলাল ১৮৭৯ সালে এই জমিদারির মালিক হন এবং পরবর্তীতে তিনি ১৮৮৫ সালে ‘রাজা’, ১৮৯২ সালে ‘রাজা বাহাদুর’ এবং ১৮৯৬ সালে ‘মহারাজা’ উপাধি অর্জন করেন।

গোবিন্দলালও সোনা, হীরা জহরত এর পেশায় লিপ্ত ছিলেন। ধারণা করা হয়, তার আকর্ষণীয় ‘তাজ বা রত্ন’খচিত মুকুটের কারণে এই এলাকার নামকরণ তাজহাট করা হয়।

বিশাল এ প্রাসাদটি পূর্বমুখী দোতলা, এর দৈর্ঘ্য ৭৬.২০ মিটার। ইতালি থেকে আনা সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি ১৫.২৪ মিটার প্রশস্থ ৩১টি কেন্দ্রীয় সিঁড়ি সরাসরি দোতলায় চলে গিয়েছে। বাড়ির পিছনে গুপ্ত সিঁড়ি ও শ্বেত মার্বেল পাথরের ফোয়ারা রয়েছে।

Advertisement

প্রায় ২১০ ফুট প্রশস্ত প্রাসাদটি চারতলা ভবনের সমান উঁচু এবং এর সামনে রয়েছে বিশাল মাঠ। তার দু’পাশে রয়েছে পুকুর এবং সারি সারি গাছ। প্রাসাদটির নির্মাণশৈলীতে মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে। এটি অনেকটা ঢাকার আহসান মঞ্জিলের আদলে তৈরি।

মার্বেল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেই জাদুঘর। সেখানে রয়েছে রাজা-বাদশাদের ব্যবহৃত অনেক নিদর্শন। বোন মরিয়মকে দেওয়া বেগম রোকেয়ার চিঠি। এ ছাড়াও রয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফ, সম্রাট আওরঙ্গজেবের খুৎবা, বিখ্যাত কবি শেখ সাদির ফরাসি কবিতা, পোড়ামাটির ফলকসহ অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন।

১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রাসাদটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাড়িটিকে ১৯৯৫ সালে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে তাজহাট জমিদার বাড়ি প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি জায়গা।

জাদুঘরটি গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা এবং শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সেখানে প্রবেশে নির্দিষ্ট ফি রয়েছে। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে রংপুর বাসে যেতে হবে। এজন্য গ্রীন লাইন, টি আর ট্রাভেলস, নাবিল পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কিছু বাস সার্ভিস রয়েছে। শ্রেণিভেদে ৫০০-১১০০ টাকা ভাড়া লাগবে। বাস থেকে নেমে সহজেই রিক্সা, ভ্যান বা অটো রিক্সায় তাজহাট জমিদার বাড়ি যাওয়া যাবে।

এছাড়া ঢাকা-রংপুর রেল যোগাযোগ এর জন্য রয়েছে রংপুর এক্সপ্রেস যা ঢাকা থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে ছাড়ে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে এবং রংপুর পৌঁছায় ৭টা ৫ মিনিটে। সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা

রংপুর শহরে থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল যেমন- হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার, হোটেল দি পার্ক, হোটেল শাহ আমানত, হোটেল তিলোত্তমা প্রভৃতি। এছাড়া খাবারের জন্যেও রয়েছে বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট।

জেএমএস/এএসএম