লকডাউনে দেশে সাধারণ ছুটি চলাকালীন সরকারি চালকদের পরিশোধ করা ওভারটাইমের অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেতন পরিশোধের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
Advertisement
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে গত বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব আবেদনটি করেন। বিষয়টি তিনি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
রিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক (অর্থ মন্ত্রণালয়), পরিবহন পুলের অতিরিক্ত সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Advertisement
আইনজীবী হুমায়ুন কবীর পল্লব জানান, ‘করোনার সময় সারা দেশে সাধারণ ছুটি ছিল এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল প্রকার যানবাহনও বন্ধ ছিল। প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষের ঘরের বাইরে বের হওয়া অনেকটা নিষিদ্ধ ছিল। গত বছরের ২৬ মার্চ হতে ১৫ জুন পর্যন্ত পুরো দেশ ছিল লকডাউন। তারপর থেকে সীমিত আকারে সরকারি অফিস-আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।’
১৯৮০ সালের একটি পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি গাড়ি চালকগণ মাসে সর্বোচ্চ ২৫০ ঘণ্টা ওভারটাইমের জন্য বেতন-ভাতা পেতে পারেন। যেহেতু করোনাকালীন অফিস-আদালত বন্ধ ছিল সেহেতু সরকারি চালকদের ওভারটাইম করার কোনো সুযোগই ছিল না।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক চালকই কোনো না কোনো সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অধীনে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। তাদের ওভারটাইমের প্রত্যয়নের জন্য প্রত্যেক সরকারি অফিসার একটি প্রত্যয়নপত্রও দিয়ে থাকেন। যার ভিত্তিতে ওভারটাইমের অর্থ পরিশোধ করা হয়।’
‘লকডাউনের সময়ে সরকারি কর্মকর্তাগণ তাদের চালকদের প্রতি মাসে ২৫০ ঘণ্টা ওভারটাইমের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। এভাবে ওভারটাইম না করেও চালকরা সরকারি রাজস্ব থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেছেন, যা শুধু বেআইনি নয় বরং অনৈতিক ও সরকারি চাকরি আইনের পরিপন্থী এবং সেই সঙ্গে দণ্ডবিধি অনুযায়ী প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
Advertisement
আইনজীবী হুমায়ুন কবীর পল্লব আরও বলেন, সরকারি চালকরা ওভারটাইম না করেও ওভারটাইমের জন্য বেতন-ভাতা নিয়ে অপরাধ করেছেন। অন্যদিকে যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদেরকে ওভারটাইম না করা সত্ত্বেও প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই দণ্ডবিধি এবং সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
বিষয়টি তদন্ত করে পরিশোধিত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেয়া এবং সংশ্লিষ্ট চালক ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণের জন রিটে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।
এর আগে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এফএইচ/জেডএইচ/এমকেএইচ