দেশজুড়ে

অপহরণের ৪ দিন পর মিললো সোহাগের মরদেহ

অপহরণের চার দিন পর বাগেরহাটের শরণখোলার তারিকুজ্জামান সোহাগের (১৮) মরদেহের সন্ধান পাওয়া গেল। সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ১৪ নভেম্বর বিকেলে ছেলে অপহরণের পর উপজেলার উত্তর কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা মৃত. বাদশা মিয়া তালুকদারের স্ত্রী তাছলিমা বেগম (৪৫) শরণখোলা থানায় অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ অপহৃতকে উদ্ধারের জন্য তৎপরতা শুরু করেন। কিন্তু ঘটনার চারদিন পর সোহাগ তার মায়ের নিকট ফিরে এলেন প্রাণহীন দেহে। বুধবার রাত ৯টার দিকে সুন্দরবন থেকে হতভাগ্য এই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলেও  বিকেল পর্যন্ত মামলা হয়নি।পুুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় একটি ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে ছোট চাকরি করতেন শরনখোলার সোহাগ তালুকদার। এ বছর নতুন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গত ১৩ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে জরুরি ভিত্তিতে আসেন সোহাগ। পরের দিনে ১৪ নভেম্বর  বিকেলে রায়েন্দা রাজৈর বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকাগামী ফাল্গুনী পরিবহনের কাউন্ডার থেকে ঢাকায় যেতে টিকিট কাটে সোহাগ। স্থানীয় টিকিট কাউন্টারের মালিককে টাকা পরিশোধ করে  সোহাগ তাদের জানান, বিকেল পাঁচটার দিকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মোড়েলগঞ্জ থেকে তিনি গাড়িতে উঠবেন। এর পরপরই একটি মোটরসাইকেল যোগে এক যুবকের সঙ্গে কাউন্টার এলাকা থেকে বেরিয়ে যান সোহাগ। এর আগে সোহাগ বাড়ি থেকে বের হবার সময়ে তার মা তাসলিমাকে জানান, ঢাকায় যাবার আগে বিকেলে গাড়িতে উঠে ফোন করবে মাকে। অন্যদিকে, গাড়ি ছাড়ার সময় অতিবাহিত হলেও সোহাগের কোনো ফোন না আসায় সোহাগের মা তাছলিমা বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে ছেলের খোঁজ নিতে ফাল্গুনি পরিবহনের সুপার ভাইজারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন সোহাগ নামের কোনো যাত্রী সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গাড়িতে উঠেনি। তাছলিমা বেগম বলেন, ১৪ নভেম্বর বিকেলে বাড়ি থেকে বের হবার আগে বিকেল তিনটার দিকে সোহাগের ফোনে একটি কল আসলে তার ব্যস্ততা বেড়ে যায় এবং ফোনদাতাকে সোহাগ বলে, `ভাইয়া আমি একটু পরে বের হয়ে আপনার সাথে দেখা করবো।` একই দিন অনুমানিক রাত সাড়ে আটটার সময় অজ্ঞাত একাধিক নম্বর থেকে তাছলিমা বেগমের কাছে ফোন করে ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা, ১০টি মোবাইল ফোন,পাঁচটি স্বর্ণের চেইন, ২ কার্টুন বেনসন সিগারেটসহ কোমল পানীয় টাইগার দাবি করা হয়। অন্যথায় তার ছেলেকে হত্যা করা হবে এমন হুমকি আসে। এরপর তাসলিমা বেগম শরনখোলা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।এ ঘটনার চারদিন পর স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে পুলিশ সোহাগের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার গভীর জঙ্গলে। শরণখোলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জাগো নিউজকে জানান, ধারণা করা হচ্ছে ওই যুবকের কোনো পূর্ব পরিচিত ব্যক্তিরা তাকে সুকৌশলে সুন্দরবনে নিয়ে যায় এবং পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহ গভীর জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে যায়। ওসি আরও বলেন সোহাগের বাবা মৃত. বাদশা মিয়ার রেখে যাওয়া সম্পত্তির লোভে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।এছাড়া মোবাইলে ফোন করা সোহাগের পরিচিত জন হিসেবে ওই ভাইয়াকে খোঁজা হচ্ছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত বাগেরহাট সদর হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুপুরে সম্পন্ন হয়েছে। তবে সোহাগের মা তাসলিমা বেগম পুত্রশোকে অসুস্থ থাকায় বিকেল পর্যন্ত থানায় মামলা রের্কড হয়নি।শওকত আলী বাবু /এমজেড/পিআর

Advertisement