অন্যান্য দেশে যেভাবে টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হয় বাংলাদেশেও চাইলে সেভাবে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা সম্ভব হলেও তা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
সেনাপ্রধানের দুই ভাইয়ের সাজা মওকুফ করার ক্ষেত্রে একটি গণমাধ্যম বলেছে তাদের সাজা ২০১৯ সালে মওকুফ করা হয়েছিল, সেটা কোন পদ্ধতিতে করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সাজা মওকুফ করা হয়েছে কি না জানি না। তবে একজনের সাজা মওকুফ হয়েছে বলে আমি জানি। আমি পুরোপুরি বিষয়টা নিয়ে ওয়াকিবহাল নই। তবে তারা যে কারণে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনির এক আত্মীয়কে খুন করার অপরাধে। অর্থাৎ জাতির পিতার হত্যাকারীর সহযোগীকে হত্যা করার অপরাধে তারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এছাড়া খুনের সাজা মাফ করার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির আছে।
‘বাংলাদেশে বহুজনের সাজা মাফ করা হয়েছে, সে এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির আছে। বিচার বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রপতি সেটি মাফ করেন। এখন তারা বহু বছর সাজা খেটেছেন, একজন সম্ভবত ২০ বছর সাজা খেটেছেন। একপর্যায়ে কিন্তু সাজা মওকুফ করা হয়। এটি একটি ইউজুয়াল প্রসিডিউর। অনেক দিন সাজা খাটার পর কয়েদি যদি ভালো আচরণ করে সেক্ষেত্রে সাজা মওকুফ করা হয়, সেটা ইউজুয়াল প্রসিডিউর।’
Advertisement
তিনি বলেন, আল জাজিরার রিপোর্ট যেটি করা হয়েছে আপনারা দেখেছেন, সেটি শিরোনামের সঙ্গে রিপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই। শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘অল আর দ্যা প্রাইম মিনিস্টার ম্যান’। ভেতরের প্রতিবেদন হচ্ছে সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। প্রতিবেদনটি দেখেশুনে মনে হয়েছে এটি ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করা একটি রিপোর্ট। এই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করা রিপোর্ট, আল জাজিরার মতো একটা টেলিভিশনে যখন হয় সেই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আল জাজিরার গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু কমেছে। বিশ্বব্যাপী আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
‘তাদের নিরপেক্ষতা-বস্তুনিষ্ঠটা, একইসঙ্গে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রশ্ন যে আজ উঠেছে তা নয়, এ প্রশ্ন বহুবার উঠেছে। বহু দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ আছে। এমনকি ভারতেও বন্ধ, এখনো অনেক দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে। আল জাজিরার জন্য আমার খুব কষ্ট এই রিপোর্ট দেয়ার পর তারা বাংলাদেশে প্রচণ্ড পরিমাণ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচণ্ডভাবে লোপ পেয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।’
প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরও আল জাজিরার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারতাম। অন্যান্য দেশে যেভাবে টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয় আমাদের দেশে চাইলে সেভাবে বন্ধ করতে পারতাম। আমরা বন্ধ করিনি। কারণ আমরা গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলেও সব গণমাধ্যমের নিজস্ব একটি দায়িত্ব থাকে। আল জাজিরা এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা একটি পক্ষ হয়ে এবং সম্ভবত একটি পক্ষের পক্ষ থেকে আমরা যেটি শুনেছি এটির সঙ্গে আরও বহু পক্ষ যুক্ত আছে। এটি সেনাপ্রধানকে টার্গেট করে সরকারের সমালোচনা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ রিপোর্টের সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কোনোভাবেই এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিবেদনের পেছনে যে শক্তি আছে তার মধ্যে ডেভিড বার্গম্যান আছেন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে বিচার চলছিল। তিনি হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন, এরপর তিনি দেশত্যাগ করে চলে গেছেন। এই রিপোর্টে একসময় যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার করা হয়েছিল তাদের ইসলামিক বুদ্ধিজীবী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ডেভিড বার্গম্যান তাদের পক্ষ নিয়েছিলেন। এবং সেখানে যে মূল বক্তা মি. সামি তার অনেকগুলো নাম আছে। খালেদা জিয়ার যেমন অনেকগুলো জন্মদিন আছে, এখানে যিনি মূল বক্তা তারও অনেকগুলো নাম রয়েছে। তার যে ফিরিস্তি শুনলাম সেটি আমি আগে জানতাম না। এ রিপোর্ট হওয়ার পর তার ফিরিস্তি বের হয়ে আসছে। কখন তাকে তার পিতা ত্যাজ্যপুত্র করেছেন, কখন তিনি চুরিতে ধরা পড়েছেন, কখন তিনি কি করেছেন সে সব বিষয় আসছে। এ ধরনের লোকদের নিয়ে যখন রিপোর্ট তৈরি করা হয় তখন তো সেটি সেই গণমাধ্যমেরই ক্ষতি হয় যেটি আল জাজিরার ক্ষেত্রে হয়েছে।
Advertisement
আল জাজিরার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যদি হাইকোর্টে যায় বা আদালতে যায় সেক্ষেত্রে আদালত থেকে যদি কোনো নির্দেশনা পাই, তাহলে আদালতের নির্দেশনা অবশ্যই আমরা পালন করবো।
আইএইচআর/এআরএ/জিকেএস