গত দুই বছর আগে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, কাইরন পাওয়েল, শাই হোপ, সুনিল অ্যামব্রিস ও শিমরন হেটমায়ার, দেবেন্দ্র বিশু এবং কেমার রোচের মত নামী ও পরিচিত পারফরমারে গড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেশের মাটিতে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিল টাইগাররা।
Advertisement
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মুমিনুল হকের ব্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছিল সেঞ্চুরি। সাকিবের দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরমেন্স এবং অফ স্পিনার দেখি মেহেদী হাসান মিরাজের (এক টেস্টে ১২ উইকেট, ৭/৫৮ ও ৫/৫৯) জাদুকরি স্পিন ঘূর্ণিতে বেসামাল ওয়েস্ট ইন্ডিজে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাওয়াশ হয়েছিল।
অথচ তারচেয়ে দূর্বল, কমজোরি ও অনভিজ্ঞ দলটির কাছে এবার ঘরের মাঠে অসহায় আত্মসমর্পন মুমিনুল বাহিনীর। অভিষেক হওয়া কাইল মায়ার্স আর আনকোরা দুই স্পিনারের বোলিংয়ে নাকাল মুমিনুলের দল।
যার নামের পাশে ছিল মোটে ৪ টেস্ট, সেই অ্যান্টিগুয়ার অফস্পিনার বিশাল বপুর অধিকারী রাকিম কর্নওয়াল আর আগে ৯ টেস্ট খেলা সেন্ট ভিনসেন্টের বাঁ-হাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যানের বলেই কম্ম কাবার স্বাগতিকদের।
Advertisement
ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের সিরিজে তুলোধুনো হওয়া, তাও আবার প্রতিপক্ষ স্পিনারদের বলে- এমন নজির খুব একটা নেই। বরং এতকাল জানা ছিল, দেশের মাটিতে স্পিন বান্ধব উইকেটে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মত বিশ্ব শক্তিকে হারাতে পারে। হারিয়ে দেখিয়েছেও। সেই দল এবার ক্যারিবীয় স্পিনারদের বলে কুপোকাৎ- দেখেও বিশ্বাস করা কঠিন।
কেন এই বিপর্যয়? তা নিয়ে চলছে পোস্ট মর্টেম। যে যার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা ও পর্যবেক্ষণ করছেন। অনেকেরই মত- দল গঠন ও একাদশ সাজানোয় ছিল বড় ধরনের অদুরদর্শিতা। একাদশ গঠনে ব্যর্থতা, লক্ষ্য-পরিকল্পনা এবং কৌশল নির্ধারনে অদুরদর্শিতার কারণেই এ চরম ভরাডুবি।
পাশাপাশি দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের প্রতি কম উৎসাহ এবং দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের দূর্বল অবকাঠামো এবং অনিয়মিত ও অসময়োচিত আয়োজন এবং জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের তাতে কম অংশ নেয়াকেও অনেকে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কেউ কেউ অনেক টাকার ভিনদেশী কোচিং স্টাফ এবং নির্বাচকদের ওপরও দোষারোপ করছেন।
কিন্তু দেশের অন্যতম সিনিয়র কোচ সারোয়ার ইমরান তাদের সবার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তার মতে, দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট চর্চায় ঘাটতির কারণেই ক্রিকেটাররা জায়গামত গিয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
Advertisement
মুমিনুল বাহিনীর ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে জাগো নিউজের সাথে আলাপে কোচ সারোয়ার ইমরান বলেন , ‘আমার মনে হয় ভিনদেশী হাই প্রোফাইল কোচিং স্টাফ, টিম ম্যানেজমেন্ট আর দল নির্বাচনকে দোষারোপ করার আগে আত্ম সমালোচনা করা উচিৎ। আমার মনে হয় দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট কম খেলা এবং ওই ফরম্যাটের প্রতি উৎসাহ-আগ্রহ বলেই দিনকে দিন টেস্টে আমাদের পারফরমেন্স খারাপ হচ্ছে।’
ইমরানের সোজা-সাপটা কথা, ‘টেস্টে ভাল করার কোন শর্টকাট রাস্তা বা পথ নেই। সবার আগে ঘরোয়া ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করতে হবে। ক্রিকেটারদের বেশি করে চার দিনের ম্যাচ খেলতে হবে।’
ইমরান যোগ করেন, ‘পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে চার দিনের খেলার মান খুব খারাপ।’
এ অভিজ্ঞ কোচ ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘টেস্ট পারফরমেন্স ভাল হবে কি করে? যারা জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলে, দীর্ঘ পরিসরের খেলায় দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে, তারা তো জাতীয় লিগ প্রায় খেলেই না।’
ন্যাশনাল লিগ আর বিসিএলের সময় জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পাওয়া যায় না। ঘুরিয়ে বললে তারা অংশ নেয় না। লংগার ভার্সনের প্র্যাকটিসও করে না। মোটকথা, টেস্টেও সত্যিকার প্রস্তুতিই থাকে না। সেজন্য দীর্ঘ সময় উইকেটে থাকার মানসিকতা, ইচ্ছা-প্রবনতা আর অভ্যাস কম। ৫০ থেকে ৬০ এর ঘরে গিয়ে আউট হয়ে যায়। ইমরানের পরামর্শ, ৪ দিনের টুর্নামেন্ট বাড়াতে হবে।’
দেশের অভিষেক টেস্টেও কোচ ইমরানের অনুভব, ‘জাতীয় লিগ আর বিসিএলের বাইরে আরও বেশি করে চারদিনের ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করতে হবে।’
তার শেষ কথা, তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে জাতীয় দলের সব ক্রিকেটারকে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে উৎসাহী করে তুলতে হবে। তারা যাতে বেশী করে লংগার ভার্সান ক্রিকেট খেলতে উৎসাহী হয়- সে কাজটি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
ইমরানের ধারনা, ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি ও আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা বাড়ানো ছাড়া ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলার ইচ্ছে বাড়ানো অসম্ভব।
ইমরান যথার্থই বলেছেন। যেখানে ভারতের রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ ফি গড় পড়তা ২ লাখ রুপি, সেখানে বাংলাদেশের টপ ক্লাস ক্রিকেটাররা জাতীয় লিগে এক ম্যাচ খেলে পান ৬০ হাজার টাকা করে। প্রথম লেগে তিন ম্যাচে ১ লাখ ৮০ হাজার আর দ্বিতীয় লেগে সমান অর্থ- সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে ক্রিকেটারদের দীর্ঘ পরিসরের খেলায় উৎসাহী করা যাবে না।
এর পরিমান দ্বিগুণ না তিনগুণ করলে হয়ত উৎসাহ উদ্দীপনা বাড়বে।
এআরবি/আইএইচএস/এএসএম