ধর্ম

মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে ভাবনা

রোগ-শোক কিংবা বার্ধক্যজনিত স্বাভাবিক মৃত্যু; প্রতিনিয়তই কেউ না কেউ মরছে। তারপরও মানুষের মধ্যে মৃত্যু নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। নেই মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে ভাবনা। অথচ আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে মৃত্যু ও মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে দিয়েছেন চমৎকার বর্ণনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

Advertisement

‘প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর অবশ্যই কেয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধুই ধোঁকার সামগ্রী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)

পৃথিবীর এক চিরন্তন সত্য ‘মৃত্যু’। এ মৃত্যু নামক শব্দটি কারো জন্য প্রচণ্ড ভয়ানক আবার কারো জন্য সফলতার মানদণ্ড। দুনিয়ার জীবন থেকে আখেরাতের চিরস্থায়ী ঠিকানায় যাওয়ার অন্যতম মাধ্যমও এটি। মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে সতর্ক করতে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বান্দাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন-‘তোমরা দুনিয়ার জীবনকেই প্রাধান্য দিচ্ছ অথচ পরকালীন জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী।' (সুরা : আয়াত ১৬-১৭)

আফসোস, হায়রে মৃত্যু!দুনিয়ার প্রতিটি মানুষই প্রতিনিয়ত ঘুম থেকে ওঠে; সময়মতো নাস্তা করে, জীবিকা অর্জনে কাজ-কর্ম করে। আবার যারা আল্লাহর অনুগত বান্দা তারা সময়মতো নামাজ আদায় করে। দিনের সব কাজই রুটিন মাফিক করার চেষ্টা করে। তারপর দিনশেষে ঘুমিয়ে পড়ে। বাস্তবে জীবন ও কর্ম এমন হলেও আফসোসের বিষয় হলো বেশির ভাগ মানুষই মৃত্যুর কথা ভুলেই থাকে।

Advertisement

আফসোস, হায়রে মৃত্যু! দুনিয়ার জীবনের ব্যস্ততার ভীড়ে কয়জন মানুষ মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবে?

মানুষ তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বিশেষ করে আর্থিক ও ভবিষ্যৎ নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনটাকে বেমালুম ভুলেই থাকে। অথচ দুনিয়ার জীবনে সফলতার যেমন নিশ্চয়তা নেই, আবার দ্রারিদ্রের কষাঘাতেই জীবন যাবে এমনটি নিশ্চিত না হলেও মৃত্যু যে ঘটবে তা সুনিশ্চিত। আর তা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ বেখেয়াল।

এ কথা সুস্পষ্ট ও সত্যমানুষের মৃত্যু হবেই হবে; যে মৃত্যু নিয়ে তাদের নেই কোনো টেনশন, নেই কোনো ভাবনা। আর মুমিন বান্দার প্রধান কাজ ও দায়িত্ব হচ্ছে বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করা। মৃত্যুর স্মরণই মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দেবে।

মনে রাখতে হবেদুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। পরকালই চিরস্থায়ী। কেননা পরকালের তুলনায় দুনিয়ার অবস্থান কিংবা সময়কাল খুবই সামান্য। এ বিষয়টি নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলফ করে হাদিসে সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। সুন্দর একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। তাহলো-

Advertisement

হজরত মুসতাওরিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ! দুনিয়ার সময়কাল পরকালের তুলনায় অতটুকুই যেমন- তোমাদের কেউ তার এ আঙ্গুলটি সমুদ্রে পানিতে ভিজিয়ে দেখলে যে, কতটুকু পরিমাণ পানি এতে (আঙ্গুলের অগ্রভাগে) লেগেছে। বর্ণনাকারী এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন।’ (মুসলিম)

সুতরাং মানুষের উচিত, জীবনের প্রতিটি কাজেই মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা। মৃত্যুর স্মরণই মানুষকে দুনিয়ার সব খারাপ ও অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখতে সক্ষম। আর পরকালকে সুন্দর করতে এক কার্যকরী টনিক। আর তাতে সাফল্যমন্ডিত হবে মানুষের মৃত্যুর পরের জীবন।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে মৃত্যু ও মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে ভাবার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার কল্যাণ ও পরকালের সফলতা দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস