ইনজুরি বাঁধা। তাই তিনি নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট খেলছেন না ‘বাংলাদেশের প্রাণ’ সাকিব আল হাসান। তিনি এমন এক পারফরমার, যার অনুপস্থিতি নিয়ে সব সময়ই কথা হয়। কারণ, পারফরমার সাকিব দলের বড় সম্পদ। টিম বাংলাদেশ সব সময় অলরাউন্ডার সাকিবের অভাব বোধ করে।
Advertisement
তার আসলে কোন বিকল্পও নেই। সব সময়ই সাকিবকে মিস করে দল। ঢাকায় এই টেস্ট শুরুর আগে তার অনুপস্থিতি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। সাকিব থাকলে অনেক ‘প্লাস’। না থাকা ‘বড় মাইনাস’। তিনি ‘টু ইন, থ্রি ইন ওয়ান’। এসব পুরনো কথা নতুন করে উঠেছে।
তবে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি রোববার সাকিবের কথা বিশেষভাবে মনে হচ্ছে অনেক বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকের। তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে বেশ জোরে সোরে।
ভাবছেন আজ ভালবাসা দিবস, তাই বুঝি ভক্ত-সমর্থকরা তাকে ভালবাসায় স্মরণ করছেন। বিষয়টা তেমন নয়। সাকিবকে মিস করা হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। ঘটনার প্লটই অন্য।
Advertisement
ইতিহাস জানাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্টে সবচেয়ে বড় টার্গেট ছুঁয়ে টেস্ট জয়ের নায়কই সাকিব আল হাসান। সময়কাল ২০০৯ সালের জুলাই ( ১৭ থেকে ২০ জুলাই)।
ঠিক একযুগ আগে সেন্ট জর্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের টার্গেট ছুঁতে গিয়ে ৪ উইকেটের দুর্দান্ত জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ৯৬ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে জিতিয়ে বিজয়ীর বেশে হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছিলেন সাকিব।
টিনো বেস্ট, কেমার রোচ ও ড্যারেন সামির গড়া কিউইদের ধারালো বোলিংয়ের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে একদিনের মেজাজে ১৫৩ মিনিটে ১৩ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ওই ম্যাচ জেতানো ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন সাকিব। তার চওড়া ব্যাটেই ধরা দিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এখন পর্যন্ত স্মরণীয় জয়টি।
শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই নয়, ওই ২১৫ রানের টার্গেট ছোঁয়াটা ছিল টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ পরাজয় এড়াতে এবার হোম অব ক্রিকেটে একযুগ আগের সেই রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ভাঙ্গতে হবে টাইগারদের। এ ম্যাচে লক্ষ্য ২৩১।
Advertisement
মুমিনুলের দল কি তা পারবে? ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে, ঘরের মাঠে টাইগারদের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি এই শেরে বাংলায়। টার্গেট ছিল মোটে ১০১। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই রান তাড়া করতেও নাভিঃশ্বাস উঠেছিল টাইগারদের। হারাতে হয়েছিল ৭ উইকেট।
এবার তার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি রান করে জিততে হবে। হাতে সময় প্রায় দেড় দিন। চট্টগ্রামে ব্র্যাথওয়েট বাহিনীর ৩৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়টা অনুপ্রেরণা হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।
শুধু বাংলাদেশের মাটিতেই নয়, ঠিক আগের টেস্টেই উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় টার্গেট ছোঁয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে ক্যারিবীয়রা। সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে এসে ব্র্যাথ্রয়েটের দল, বিশেষ করে কাইল মায়ার্সরা সে অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়তে পারলে তামিম, সৌম্য, শান্ত, মুমিনুল, মুশফিক, লিটন, মিঠুন ও মিরাজরা ঘরের মাঠে শেরে বাংলায় কেন পারবেন না?
তবে সাফল্যের মঞ্চে উঠতে হলে টাইগারদের আরও একটি বড় বাধা টপকাতে হবে। মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এত রান তাড়া করে জেতার নজির নেই কারো। এই মাঠে সবচেয়ে বড় টার্গেট ছোঁয়ার কৃতিত্বটি ইংল্যান্ডের। ২০১০ সালে বাংলাদেশের দেয়া ২০৯ রানের লক্ষ্যের পিছু নিয়ে ৯ উইকেটের দারুণ জয় পেয়েছিল ইংলিশরা।
এছাড়া মিরপুরে ২০০’র বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে আর মাত্র একটি। সেটা ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে। চতুর্থ ইনিংসে ২০৫ রান করে ৫ উইকেটে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
এবার সাকিবকে ছাড়া নিজেদের ছাড়িয়ে যেতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ‘হোয়াইটওয়াশে’র বদলে সিরিজ ড্র করতে হলে সাকিবকে ছাড়াই ২৩১ রানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। মোটকথা, এ টেস্ট জিততে হলে বড় রানের টার্গেট ছোঁয়ার নতুন রেকর্ড গড়তে হবে।
তামিম, সৌম্য, শান্ত, মুমিনুল, মুশফিক, লিটন, মিঠুন আর মিরাজরা কি সে নতুন রেকর্ড গড়তে পারবেন?
এআরবি/আইএইচএস/এএসএম